আয়লানের মৃত্যুদিনে বিশ্বনেতাদের প্রতি আকুল আবেদন বাবা আব্দুল্লাহর

আয়লান কুর্দি ও আব্দুল্লাহ কুর্দিতুরস্ক উপকূলে সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির উপুড় হয়ে পড়ে থাকার ছবিটি বিশ্ববাসীর অনেকের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেলেও তা টলাতে পারেনি যুদ্ধবাজদের। এখনও বন্ধ হয়নি সিরিয়ার যুদ্ধের বিভীষিকা। সম্প্রতি আয়লানের মতোই বিপন্ন মানবতার প্রতীক হয়ে ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল আরেক সিরীয় শিশু ওমরান। হামলার পর হতভম্ব বাস্তবতায় পড়া সেই শিশুটি অবশ্য প্রাণে বেঁচে আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত চলা গোলার আঘাতে এখনও প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। আতঙ্কে এখনও শরণার্থী হচ্ছে সিরীয়রা। বিপন্ন মানবতার প্রতীক হিসেবে তুরস্ক উপকূলে তিন বছরের সিরীয় শরণার্থী আয়লান কুর্দির লাশ হয়ে ভেসে ওঠার ঘটনাটির এক বছর পূর্ণ হলো আজ (২ সেপ্টেম্বর)। আর এ দিনটিতে শরণার্থীদের হয়ে তাই বিশ্ব নেতাদের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আকুল আবেদন জানালেন আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে নৌকাডুবিতে স্বজন হারানো আব্দুল্লাহ ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন শরণার্থীদের জন্য দুয়ার খুলে দেয়। বর্তমানে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা সিরিয়ার যুদ্ধে বন্ধ করতে পারবে বলে এখনও আশা করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
সন্তানদের খেলনা হাতে বাবা আব্দুল্লাহসিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচার আশায় ইউরোপে যাওয়ার জন্য মা-বাবা ও পাঁচ বছরের এক ভাইয়ের সঙ্গে নৌকায় পাড়ি জমিয়েছিল আয়লান। কিন্তু তুরস্কের উপকূলে ডুবে যায় তাদের নৌকা। ২ সেপ্টেম্বর উপকূলে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হয় আয়লানের মরদেহ। আয়লান হয়ে ওঠে বিপন্ন মানবতার প্রতীক। ওই ঘটনায় আয়লানের ভাই এবং মা-ও মারা যায়। সবাইকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েন বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রতিদিনই সন্তানদের কথা তার মনে হয়। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর তাদের মৃত্যুদিনটি আলাদা। আব্দুল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি তাদের কথা ভাবি। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে যেন তারা আমার কাছে চলে এসেছে, আমার সঙ্গে ঘুমাচ্ছে। আর তা আমাকে আবারও ব্যথিত করে তুলছে।’


বিপন্ন মানবতার প্রতীক আয়লান
আয়লানের পর শরণার্থীদের ব্যাপারে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শুরুতে শরণার্থীদের সহায়তা করা হবে কিনা তা নিয়ে বিশ্ব উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু তা এক মাসও স্থায়ী হয়নি। সত্যিকার অর্থে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হচ্ছে এবং আরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়ছে। আমি আশা করি বিশ্বের সব নেতা মিলে যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন যেন মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশী তুরস্ক থেকে ইউরোপে পৌঁছেছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকাডুবিতে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আয়লান কুর্দিসহ আরও চারজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গত মার্চে দুই সিরীয় নাগরিককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয় তরুস্কের আদালত।

/এফইউ/