জটিল সংক্রমণে ভুগছেন দক্ষিণ আফ্রিকান নৈতিকতার বাতিঘর টুটু

download (3)

প্রায় ২০ বছর ধরে প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছেন দক্ষিণ আফ্রিকান বিবেকের বাতিঘর হিসেবে স্বীকৃত ধর্মযাজক ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী ডেসমন্ড টুটু। শান্তি আর সমতার পক্ষের এই একনিষ্ঠ প্রচারক গত কয়েক বছরে অসুস্থও হয়েছেন কয়েকবার। এবার এক জটিল সংক্রমণের কবলে পড়েছেন তিনি।

ক’দিন আগেও কেপ টাউনের সাবেক আর্চবিশপ ও নোবেল বিজয়ী টুটু পেটের অসুখের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। গত এক মাস ধরে এক জটিল সংক্রমণের কারণে আবারও হাসপাতালে আছেন তিনি। তবে তার শরীর সক্রিয় রয়েছে এবং চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। টুটুর পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এবার অপরিহার্য অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাকে।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বুধবার টুটুর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হবে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাননি পরিজনরা। তবে প্রায় ২০ বছর ধরে টুটুর প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগতে থাকার তথ্য নিশ্চত করেছেন তারা।

শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠস্বর সবসময়ই সোচ্চার ছিলো। আর্চবিশপ টুটু দক্ষিণ আফ্রিকান নৈতিকতার মানদণ্ড বলে বিবেচিত। ১৯৭০-র দশবে তরুণ যাজক হিসেবে বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সমালোচনামুখর। ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি দক্ষিণ আফ্রিকা সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসনের অধীনে থাকার সময় তিনি এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন। ১৯৮৪ সালে তিনি  দক্ষিণ আফ্রিকায় তার বর্ণবাদবিরোধী ভূমিকার কারণে শান্তিরেত নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।  

পরে ১৯৮৬ সালে তিনি কেপটাউনে এসে আর্চবিশপ হন টুটু। এর প্রায় এক দশক পর তিনি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কমিশনের কাজ ছিলো বর্ণবাদী যুগের অপরাধ তদন্ত করা। ২০১২ সালে কর্মজীবন থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।

২০১৪ সালে শারীরিকভাবে জীবনের সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলা মানুষদের আত্মহত্যার সপক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেন টুটু। একই বছর ফিলিস্তিনে ইসলায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক বিশাল শান্তি উদ্যোগে যোগ দেন।

উল্লেখ্য, আফ্রিকান  বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন টুটু। ম্যান্ডেলার সঙ্গে ডেসমন্ড টুটুর বন্ধুত্বের গভীরতা বোঝাতে বিশ্লেষকেরা একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। সেটি হচ্ছে, ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়ে ম্যান্ডেলা প্রথম রাতটি কাটিয়েছেন বন্ধু টুটুর বাসায়। ম্যান্ডেলার শেষ সময় পর্যন্ত টুটুর সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট ছিল। তবে ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া নিয়ে জ্যাকব জুমার সরকারের সঙ্গে বিরোধ তৈরী হয় টুটুর। কেননা টুটু সেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর।

সূত্র: রয়টার্স

/ইউআর/বিএ/