এক ‘রাখাল প্রেসিডেন্টের’ সীমান্তবিহীন বিশ্বের ডাক শুনলো জাতিসংঘ

জাতিসংঘে ভাষণ দিচ্ছেন ইভো মোরালেসবাজার অর্থনীতিভিত্তিক এই পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি নির্মূলের ডাক দিয়েছেন বলিভিয়ার আদিবাসী প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। বিশ্বের গুটিকয় রাষ্ট্রের সাম্রাজ্য বাসনা প্রতিহত করে সীমানা ও কাঁটাতারহীন নতুন ধারার এক মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান মোরালেস। পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদকে নির্মূল করাই এ শতাব্দীর মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, নিজের শাসনামলে বিভিন্ন জনমুখী কার্যক্রম গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন হতে পেরেছেন মোরালেস। পুঁজিবাদবিরোধী বিকল্প অর্থনীতি দিয়ে তিনি বলিভিয়ার মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ঘোচানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেন। বলিভিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কেব্‌ল কার চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইভো মোরালেসের শাসনামলে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইটও উৎপেক্ষণ হয়েছে তাঁর আমলেই। ৬৫ শতাংশ আদিবাসীর দেশ বলিভিয়ায় তিনিই প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট। পরপর তিনটি নির্বাচনে তার প্রতি আস্থা রেখেছে বলিভিয়ার জনগণ। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী তিনবারের বেশি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার বিধান না থাকায় গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেন মোরালেস। তবে চতুর্থবারের জন্য জনগণ তাকে আর চায়নি। গণভোটে তিনি হেরে গেছেন সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে। আজকের এই সফল প্রেসিডেন্ট শৈশবে লড়াই করেছেন ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে। এক সময় পরিবারের পালিত পশুকে দেখাশোনা করেই দিন কাটত তার। সে কারণে তিনি ‘রাখাল প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে পরিচিত।
জাতিসংঘের ৭১ তম অধিবেশনের বিতর্কে বিশ্বের সব মানুষ যেন একটি পরিবারের মতো বসবাস করতে পারে তার জন্য বিশ্বধারা পাল্টে দিয়ে তা নতুন করে সাজানোর আহবান জানিয়েছেন মোরালেস।
বর্তমান পুঁজিবাদী শক্তির ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে মোরালেস বলেন, ‘বিশ্ব আবারও এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতার যুগে প্রবেশ করছে যা মানব মর্যাদা, মাতৃভূমির অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কাজ করে। পুঁজিবাদী শক্তি স্থল, জল এবং আকাশপথসহ সবজায়গায় সীমান্ত আর প্রাচীর তৈরি করছে। আর তা ঠেকাতে পাল্টা বিশ্ব নাগরিকতা গড়ে তুলতে হবে যেখানে সব মানুষ একটি পরিবারের অংশ হিসেবে নির্বিঘ্নে একসঙ্গে বসবাস করতে পারবে বলে আশা করে বলিভিয়া।’
জাতিসংঘের তথ্যকে উদ্ধৃত করে মোরালেস বলেন, ‘বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষের হাতে পুরো বিশ্বের ৯৪ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে। অথচ লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য আর ক্ষুধার তাড়নায় দিনাতিপাত করছে। আর এ অলীক সমাজ বাস্তবতাই পুঁজিবাদের সত্যিকারের রূপ।’

সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে মোরালেস বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদ যদি নির্মূল না করা হয় এবং সমাজের জন্য একটি নতুন মডেল না গড়ে তোলা হয় তবে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা টেকসই মৃত্যুর লক্ষ্যমাত্রায় পরিণত হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং সাম্রাজ্যবাদের বর্বরতা ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন প্যারিস চুক্তিকে তারা ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার না বানাতে পারে।’

সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতার উদাহরণ দিতে গিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারণ করেন মোরালেস। তার মতে, ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের দখলদারিত্ব বাড়াচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র কিউবার ওপর একতরফাভাবে দমনমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছে তা সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতা।

/এফইউ/বিএ/