সাউথ সুদান

ধর্ষণের শিকার ত্রাণকর্মীদের সহযোগিতায় অস্বীকৃতি শান্তিরক্ষীদের

nonameসাউথ সুদানে ধর্ষণের শিকার হওয়া ত্রাণকর্মীদের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটিতে মোতায়েনকৃত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা। এমনকি সংঘর্ষ চলাকালে বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার চাইতে বরং নিরাপদে সেনাক্যাম্পে অবস্থান করাকেই বেছে নেয় সেনারা। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিলিয়ান্স ইন কনফ্লিক্ট (সিভিক)। ৫ অক্টোবর ২০১৬ বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধ থামাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ব্যর্থ। দেশটিতে ৬১টি সাড়ে ১২ হাজার শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন।

দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় চলতি বছরের জুলাই মাসের ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষ চলাকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটির ভেতরে ও বাইরে সম্ভাব্য কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে। ধর্ষিত হন নারীরা। বিশেষ করে ধর্ষণের শিকারে পরিণত হন ত্রাণকর্মীরা। সংঘাতের শেষ দিনে জুবার একটি কম্পাউন্ডে হামলা চালায় সরকারি সেনারা। এ সময় সেখানে পাঁচজন আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মী সেনাদের ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হন। যৌন সন্ত্রাসের শিকার হন অন্তত আরও ডজনখানেক নারী। ওই কম্পাউন্ড থেকে কয়েকশ মিটার দূরত্বেই ছিল শান্তিরক্ষীদের ক্যাম্প। কিন্তু ত্রাণকর্মীদের দফায় দফায় অনুরোধেও কান দেয়নি ওই ক্যাম্পের শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ নথিতেও দেখা গেছে, ওই সময়ে সেখানে কোনও সাহায্য করা হয়নি। এ বিষয়ে গত আগস্টে বার্তা সংস্থা এপিতে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

সংঘর্ষকালে শান্তিরক্ষী বাহিনী সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা না করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ওই সংঘর্ষে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হন। সে সময় জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয় চাওয়া ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে শান্তিরক্ষীরা।

পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে বর্তমানে ১২ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন এবং ২ লাখের বেশি মানুষ জাতিসংঘের শিবিরগুলোর আশ্রয়ে রয়েছে।

৫৯ বেসামরিক সুদানি নাগরিক ও ২১ জাতিসংঘ মিশনের কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কিছু শান্তিরক্ষী সংঘর্ষের সময় সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা দানের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। সে সময় সরকার ও বিরোধী বাহিনীর সংঘর্ষে শত শত মানুষ মারা যায়।

সংঘর্ষের সময় শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ৫ হাজারের মতো বেসামরিক মানুষ জাতিসংঘ শিবিরের প্রশাসন ভবনের বেড়া ও কাঁটাতার টপকে পালিয়ে যায়। এ সময় কিছু লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় দু’জন চীনা শান্তিরক্ষী নিহত হন ও ছয়জন মারাত্মকভাবে আহত হন।

ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, শান্তিরক্ষীরা পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে অক্ষম।

এর আগে দেশটির সরকারি বাহিনী মালাকালের এক জাতিসংঘ শিবিরে আক্রমণ করেছিল। সে সময় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেন, সমন্বয়হীনতার অভাবে শান্তিরক্ষী বাহিনী সাধারণ জনগণকে প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করতে পারছে না। স্বচ্ছতার অভাবে তারা মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।

চলতি বছরের আগস্টে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আরও চার হাজার শান্তিরক্ষী গ্রহণে ও জাতিসংঘ মিশনের ওপর থেকে বিধিনিষেধ অপসারণে দক্ষিণ সুদান সরকারকে চাপ দেয়। তবে দেশটির ক্যাবিনেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী মার্টিন এলিয়া লমরো বলেন, চাপের মুখে তারা জাতিসংঘের আহ্বান মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

/এমপি/