হাইতিবাসীর হতাশা রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়, ত্রাণবাহী গাড়িতে লুটপাটের চেষ্টা

ম্যাথিউ দুর্গত হাইতিবাসীহারিকেন ম্যাথিউর তাণ্ডবের পর ত্রাণের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা ক্ষুধার্ত হাইতিবাসীর হতাশা ক্রমাগত সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। বিতরণের জন্য অপেক্ষা করার ধৈর্য হারিয়ে ত্রাণবাহী গাড়িতে লুটপাট চালানোর চেষ্টা করছেন ক্ষুব্ধ জনগণ। অন্যদিকে তাদের ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁদানে গ্যাস। এমন পরিস্থিতিতে হাইতির জন্য আরও বেশি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন শনিবার হাইতি সফরে যান। তিনি নিজেও লা কায়ে এলাকায় এরকম একটি লুটপাটের ঘটনা দেখেছেন।
আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বান কি মুনকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পৌঁছানোর ঠিক আগে আগে লে কায়ে এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ত্রাণবাহী গাড়ি পৌঁছানোর পর শ’খানেক লোক শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পরে হাইতির পুলিশ ও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা তাদের কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। বান কি মুনের হেলিকপ্টার পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
বান কি মুন বলেন, ‘জরুরী সাহায্যের জন্য যারা অপেক্ষা করছে তাদের অধৈর্য এবং ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ আমরা বুঝি। দ্রুত সাহায্য আনার জন্য আমরা যতটা সম্ভব করছি"।
ক্ষুব্ধ হাইতিবাসীর ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়
গত ৪ অক্টোবর হাইতির উপকূলে আঘাত হানে হারিকেন ম্যাথিউ। ঝড়টির তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রাম নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেছে। হাজার হাজার বাড়ি-ঘর,শস্য ও খাদ্য সংরক্ষণাগার ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০১০ সালে ভূমিকম্পের পর হাইতিতে যেভাবে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছিল সেরকম করেই কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার সরকারি হিসেবে ম্যাথিউর কারণে মৃতের সংখ্যা ৩ শতাধিক বলে জানানো হলেও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসেব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা হাজার ছুঁয়েছে। হাইতির বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নিহতের মোট সংখ্যা ও ধ্বংসের প্রকৃত চিত্র জানতে কর্মকর্তাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পরবর্তী তিন মাসে হাইতির জনগণকে সহায়তার জন্য প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। বলা হয়েছে, দেশটির ১৪ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

হারিকেন ম্যাথিউর ধ্বংসযজ্ঞের পর হাইতি এখন ‘সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ’ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জোসেলেরমে প্রিভার্ট। পরিস্থিতি ঠিকমতো সামলানো না গেলে তিন-চার মাসের মধ্যেই সে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।

হাইতিতে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। এরই মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কলেরায় মৃত্যুর ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবাহিত এই রোগটি হাইতিতে প্রথম ছড়ায় ২০১০ সালের ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘের নেপালি শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে। এসময় কলেরায় প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যায়।

/এফইউ/