অগ্নিসংযোগের পর ক্যালে’র পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু

noname‘জঙ্গল ক্যাম্প’ হিসেবে পরিচিত কুখ্যাত ক্যালে শরণার্থী শিবিরের বিদায়ী বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অগ্নিসংযোগ ও গ্যাস বিস্ফোরণের পর এখন সেটি পরিষ্কার করা হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত শরণার্থীদের এই অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পটি নিয়ে দেশটির ডানপন্থী রাজনীতিকসহ অনেকেরই আগে থেকে আপত্তি ছিল। অবশেষে গত সোমবার এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে এদিন সেখানে ১২০০-এর বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উচ্ছেদকৃত শরণার্থীদের বাসযোগে ফ্রান্সের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। তারা সেখানে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন।

ফ্রান্সের স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা ফ্রান্স ইনফো রেডিওকে বলেন, ফের অগ্নিসংযোগ এড়াতে খালি ক্যাম্পগুলো অপসারণের কাজ আজও অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানান, এই অগ্নিসংযোগ নিবৃত্ত করার কাজটি বেশ কঠিন। শরণার্থীদের অনেকে নিজেদের রীতিনীতি অনুযায়ী এটা করছেন।

তিনি বলেন, কিছু শরণার্থী ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। আমরা তাদের অগ্নিসংযোগ না করতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁবু ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা নিজেদের শিবির পুড়িয়ে দেয়।

সোমবারের ওই অভিযানের আগে রবিবার ক্যালের শরণার্থীদের এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।

গত সেপ্টেম্বরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এই ক্যাম্প সম্পূর্ণভাবে বন্ধের নির্দেশ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ব্রিটেনের সীমান্তবর্তী ফরাসি শহর ক্যালের শরণার্থী শিবিরটি জঙ্গল ক্যাম্প নামে পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা বাস করছে সেখানে। এদের অনেকের প্রধান উদ্দেশ্য সীমান্ত অতিক্রম করে ব্রিটেনে প্রবেশ করা। ওই ক্যাম্পগুলোয় সাত হাজারের বেশি মানুষ মানবেতরভাবে রয়েছে যাদের অনেকেই গোপনে ট্রাকে করে ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা করে। যদিও দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, এই ক্যাম্পে দশ হাজারের বেশি বাসিন্দা রয়েছে।

ক্যালের এই ক্যাম্পটিকে বর্ণনা করা হতো, শরণার্থী সমস্যা সামলাতে ইউরোপের ব্যর্থতার একটি উদাহরণ হিসাবে। ফরাসি সরকার সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল, ক্যাম্প উচ্ছেদের কার্যক্রমে কোন বাধা এলে তখন পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে। এর আগে এ বছরের শুরুর দিকে এই ক্যাম্পের আরেকটি অংশ উচ্ছেদ করা হয়।

সেপ্টেম্বরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেন, ক্যালের ‘জঙ্গল’নামে পরিচিত বিতর্কিত ও অস্থায়ী শরণার্থী শিবির সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হবে। গত সোমবার উত্তরাঞ্চলীয় কালাইস নগর পরিদর্শনের সময় ওলাঁদ বলেন, ‘এখন থেকে আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট- আমরা ক্যালে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই, জনজীবনে শৃঙ্খলা রাখতে চাই এবং অভিবাসী ও শরণার্থীদের অবস্থার উন্নতি করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ক্যালের ‘আগ্রাসী শরণার্থী’দের তিনি জানাতে চান, তাদের আর শরণার্থী শিবিরে থাকতে হবে না, কেননা সেটা ‘তাদের স্থান নয়।’

উল্লেখ্য, এই ক্যাম্পটি কুখ্যাত হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে শরণার্থীদের একটি প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। শরণার্থীরা প্রায়শই যুক্তরাজ্যগামী কারগো গাড়িতে করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সে কারণে তারা জঙ্গল ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে আগ্রহী হন না। কেননা, ব্রিটেনই তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।

এক মাস আগেই ফ্রান্স থেকে শরণার্থী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে বিরাট এক দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলো যুক্তরাজ্য। এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ। ব্রিটেন এতে সাড়া দিয়ে কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার অঙ্গীকার করে। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/