‘ক্লিয়ার দ্য এয়ার অব চিলড্রেন: দ্য ইমপ্যাক্ট অব এয়ার পলিউশন অন চিলড্রেন’ শীর্ষক ইউনিসেফ-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘরের ভেতরে বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। উন্নত রান্নার চুলা ব্যবহার তুলনামূলকভাবে সীমিত হওয়ায় কাঠ বা গোবর পোড়ানো চুলা থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনে এ সম্পর্কিত সচেতনতার অভাবকেও সমস্যা হিসেবে দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের যে চিত্রও তুলে ধরা হয়, সেখানে দেখা যায়, কয়লা, কাঠ, গোবর ইত্যাদি জ্বালানি হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া ও তাপে ঘরের বায়ু দূষিত হয়। গ্রামাঞ্চলের স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশুরাই এর সবচেয়ে বড় শিকার। এর ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে আট হাজার শিশুর মৃত্যু হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে এখনও শতকরা ৮৯ শতাংশ বাড়িতে রান্নার কাজে কাঠ ও গবাদিপশুর গোবর শুকিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। ঘর গরম করার জন্যও এসব ব্যবহার করা হয়।
এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে বাংলাদেশে উন্নত ও পরিষ্কার চুলা ব্যবহার করতে সংশ্লিষ্ট কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। আর এমনটা করা সম্ভব হলে ২০৩০ সালের মধ্যে শতকরা ১০০ ভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রান্না ঘরের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে সমস্যার সমাধানে করণীয়ও বলে দেওয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে তিন কোটিরও বেশি পরিবারকে উন্নত রান্না সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা হলেই শিশুকে অন্তত ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হবে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি সাতজন শিশুর একজনই এমন এলাকায় বসবাস করে, যেখানকার বাতাস ভয়াবহ পরিমাণে দূষিত। আর ওই বায়ুদূষণের শিকার শিশুদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ার বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
ইউনিসেফ-এর ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বে বায়ুদূষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ৩০ কোটি। এর ফলে মস্তিষ্কের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে ক্ষতিসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পতিত হতে পারে ওই শিশুরা। প্রতিবছর ঘরের ভেতর এবং বাইরের বায়ুদূষণের ফলে ছয় লাখেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়, যাদের বয়স পাঁচ বছরেরও কম।
/এসএ/