যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা বাণিজ্য চুক্তি

 

যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা`র পতাকাদীর্ঘ বৈরিতার অচলায়তন ভেঙে বাণিজ্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা। দীর্ঘ ৫০ বছর পর বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে এ প্রথম এ ধরনের কোনও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিন কিউবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউবা এক্সপোর্ট কয়লা কয়লা বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াবানা ট্রেডিংয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথমে ‘মারাবু’ নামের ৪০ টন বিশেষ কয়লা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করবে কিউবা। টনপ্রতি ৪২০ ডলার হিসেবে পুরো চালানের দাম পড়বে ১৬ হাজার ৮০০ ডলার।

কিউবা’র রাষ্ট্রীয় রফতানিকারক সংস্থা কিউবাএক্সপোর্টের পরিচালক ইসাবেল ও’রেইলি। কিউবা’র সরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এটা আমাদের মধ্যে প্রথম চুক্তি। কিন্তু আমরা আশা করি আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক বহু বছর ধরে অব্যাহত থাকবে। শুধু উদ্ভিজ্জ কাঠকয়লা নয়; মধু ও কফি’র মতো অন্যান্য সামগ্রি রফতানিতেও আমরা প্রস্তুত।”

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ‘মারাবু’র প্রথম চালান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণের দুই দিন আগে ১৮ জানুয়ারি এটি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে।

শীতল যুদ্ধে ভিন্ন অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্কে নানা জটিলতা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে  সম্পর্কোন্নয়নের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবারের এ চুক্তিকে তাই দুই দেশের দীর্ঘ বৈরিতার অবসানের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবার মধ্যে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। এরপর প্রায় পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এ কারণে পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্কও নষ্ট হয়। পরে কিউবার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয় ওবামা প্রশাসন। তবে গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবার মধ্যে বিদ্যমান চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তখন ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কিউবা তার দেশের জনগণ, কিউবান-আমেরিকান নাগরিক এবং সর্বপোরি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও ভালো একটি চুক্তি করতে আগ্রহী না হলে আমি যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা চুক্তির ইতি টানবো।’

কিউবার শোকাহত জনগণ যখন বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময়ে আক্রমণাত্মক এ টুইট করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন অবস্থানকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ কিউবার সঙ্গে দীর্ঘ বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওবামা প্রশাসন। এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে কিউবার সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য, ভ্রমণ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা অগ্রগতি লাভ করে।

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর শনিবার এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রশাসন কিউবানদের মুক্তি এবং অগ্রগতির জন্য যা করা দরকার, তা-ই করবে।

ওবামা প্রশাসনের মেয়াদকালেই এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলেও ট্রাম্পের পূর্ব হুমকির ফলে চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: রয়টার্স, স্পুটনিক।

/এমপি/