ছেলেদের সঙ্গে সাঁতারে কন্যাকে নিবৃত্ত করতে পারবেন না মুসলিম মা-বাবা

nonameসুইজার‍ল্যান্ডে মুসলিম বাবা-মায়েরা ছেলেদের সঙ্গে সাঁতারে তাদের নিজ কন্যাকে নিবৃত্ত করতে পারবেন না। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর সম্প্রতি এমন রায় দিয়েছে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত।

ছেলেদের সঙ্গে মুসলিম মেয়েদের একসঙ্গে সাঁতার নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয় ২০০৮ সালে। ওই বছর সুইজারল্যান্ডের বাসেলে স্কুলের সাঁতারের ক্লাসে নিজেদের তরুণী কন্যাদের পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান কিছু মুসলিম অভিভাবক। সুইমিং পুলে ৭ কিংবা ৯ বছরের কন্যাশিশুদেরও ছেলেদের সঙ্গে সাঁতারে পাঠাতে নিজেদের অসম্মতির কথা জানান তারা। তবে তাদের এমন দাবি নাকচ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

মুসলিম অভিভাবকদের অসম্মতির প্রেক্ষিতে কর্মকর্তারা জানান, মুসলিম ছাত্রীরা চাইলে বুরকিনি পরে আসতে পারে। ছেলেদের অনুপস্থিতিতে তারা পোশাক পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু তাদের সাঁতারের ক্লাসে হাজির থাকতে হবে। কিন্তু কর্মকর্তাদের এমন প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হননি অভিভাবকরা। এক পর্যায়ে শহরের কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেয়, মা-বাবা তাদের মেয়েদের সাঁতারের ক্লাস থেকে নিবৃত্ত রাখলে ১৪০০ সুইস ফ্রাঙ্ক (প্রায় ১৩৮০ ডলার) জরিমানা করা হবে। মা-বাবা হিসেবে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য তাদের ওপর এ জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এক পর্যায়ে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের একই সুইমিং পুলে সাঁতার শেখানোর বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের আদালতে যান এক মুসলিম দম্পতি। তবে তাদের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারকরা। এই মুসলিম দম্পতি তাদের মেয়েকে সাঁতার শেখানোর ক্লাশে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর স্কুল তাদের জরিমানা করে। তখন তারা আদালতের দ্বারস্থ হন এই বলে যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের মেয়েকে ছেলেদের সঙ্গে সাঁতার কাটতে বাধ্য করে ধর্মীয় বিধান লঙ্ঘন করছে।

এই মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেখানকার বিচারকরা সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, স্কুল কর্তৃপক্ষের নীতি ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ। তবে এক্ষেত্রে কোনও ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করে না আদালত।

বিচারকরা বলেছেন, শিশুদের সমাজে আর সবার সঙ্গে মিলে-মিশে থাকার শিক্ষার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অভিবাসী শিশুদের ক্ষেত্রে।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত আরও বলেছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে মুসলিম মেয়েদের 'বুরকিনি' (পুরো শরীর ঢেকে রাখা সাঁতারের পোশাক) পরার সুযোগ দিয়ে একটা রফা করতে পারতো। তবে সুইস কর্তৃপক্ষের অধিকার আছে তাদের পছন্দমতো নিজেদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করার।

সুইজারল্যান্ডের এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একেবারে কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে একসঙ্গে সাঁতার কাটার নিয়ম শিথিল করার সুযোগ নেই। কেবল যেসব মুসলিম মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে তাদের ক্ষেত্রেই ছেলেদের সঙ্গে একই সুইমিং পুলে সাঁতার না কাটার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়। এর বাইরে মুসলিম বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েকে ছেলেদের সঙ্গে সাঁতারের ক্লাসে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে পারবেন না। সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি।

/এমপি/