ট্রাম্প প্রশাসন হবে একটি ব্যর্থ করপোরেট সরকার: বিশেষজ্ঞ মতামত

জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পডোনাল্ড ট্রাম্প হবেন একজন ব্যর্থ ও বিরোধপূর্ণ প্রেসিডেন্ট। তার সরকারের চারিদিকে রয়েছে বিবিধ বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের হুমকি। করপোরেট প্রশাসন সম্পর্কিত এক বিশেষজ্ঞ এই মতামত জানিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি-র সেন্টার অন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স-এর পরিচালক প্রফেসর থমাস ক্লার্ক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার সন্দেহ, তিনি হয়তো দুই বছরই টিকতে পারবেন। এমনকি তা কয়েক মাসের মধ্যেই হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা এর আগে এমন কিছু দেখিনি। এমন স্বার্থের সংঘাত নজিরবিহীন।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যে রয়েছে ১৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে তার বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের বাণিজ্যিক স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কলুষিত করতে পারে।

প্রফেসর থমাস ক্লার্ক বলেন, অভ্যন্তরীণ কিংবা বৈদেশিক নীতিতে তার সরকার যে সিদ্ধান্তেই উপনীত হোক; লোকজন অবশ্যই সেদিকে আঙ্গুল তুলবে। মানুষজন বলবে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বদলে তার নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পিত ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা ‘পুরোপুরিভাবে অপর্যাপ্ত’।

ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর তার পুত্ররা ট্রাম্প অর্গানাইজেশন পরিচালনা করবেন। অর্গানাইজেশনের কোনো কাজে ট্রাম্প অংশ নেবেন না।

সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ডন ও এরিক কোম্পানি পরিচালনা করতে যাচ্ছে। তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গেই এটা করতে যাচ্ছে। তারা এসব বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করবে না।’

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য একমত নন মার্কিন ইথিক্স দফতরের পরিচালক ওয়াল্টার শাউব। তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে অপর্যাপ্ত। ট্রাম্প বরং তার বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তৃতীয় কোনও পক্ষকে নিয়োগ করতে পারতেন। অথবা তিনি আসলেই এমন একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন যার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।

চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের ইথিক্স দফতরের এ পরিচালক বলেন, এটা কোনও নিরপেক্ষ ট্রাস্ট নয়। এর কাছাকাছি কিছুও নয়। এখানে শুধু একটা শব্দেরই মিল রয়েছে। সেটা হচ্ছে ট্রাস্ট। তার ছেলেরা ব্যবসা পরিচালনা করছে। অবশ্যই তিনি তার মালিকানা সম্পর্কে সচেতন।

আইন বিশেষজ্ঞরা এরইমধ্যে ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য নিয়ে তাকে সতর্ক করেছেন।

হোয়াইট হাউসের ইথিক্স বিষয়ক আইনজীবী নরম্যান এইসেন। তিনি বলেন, তিনি এ সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের দিকে যাচ্ছেন। এটার শুরুটা সেখানে; যেখানে সংবিধানে বিদেশি সরকারের কাছ থেকে তার অর্থ গ্রহণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তিনি যা পচ্ছেন।’

বৈদেশিক স্বার্থ:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের বিজনেস পার্টনার বানিয়ে একজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান।

সেঞ্চুরি প্রপার্টিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান জোস ইবি অ্যান্টোনিও বর্তমানে ওয়াশিংটনে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কিত দূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার সেঞ্চুরি সিটিতে ট্রাম্প টাওয়ার তৈরি করছে। ৫৭ তলার এ ভবন তৈরিতে ব্যয় হবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। এ কাজে ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতা সীমিত হলেও তার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ঘটনাকে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি বাণিজ্যিক স্বার্থে অন্য দেশগুলোর আগ্রহী হওয়ার প্রথম উদাহরণ হিসেবে দেখছেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি-র সেন্টার অন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স-এর পরিচালক প্রফেসর থমাস ক্লার্ক। তার ভাষায়, ‘এটা খুবই অপ্রীতিকর এবং ভবিষ্যতের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।’

ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তের এ ঘটনাই নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি বিদেশিদের বাণিজ্যিক আগ্রহের একমাত্র উদাহরণ নয়। চলতি মাসের গোড়ার দিকেই এ ধরনের আরেকটি খবর দেয় এবিসি টেলিভিশন। এতে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ার একজন ব্যবসায়ী ট্রাম্পের নামে একটি গলফ রিসোর্ট তৈরি করছেন। ওই ব্যবসায়ী ইন্দোনেশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হতে আগ্রহী।

প্রফেসর থমাস ক্লার্ক বলেন, এই স্বার্থের সংঘাত শুধু আসন্ন প্রেসিডেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

তার ভাষায়, ‘তার পুরো মন্ত্রিসভাই সংঘাতপূর্ণ।’

ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি-র সেন্টার অন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স-এর এই পরিচালক বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। শ্রমমন্ত্রী এর আগে কর্মীদের ন্যূনতম বেতন প্রদানের বিরোধিতা করেছিলেন। পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন টেক্সাসের সাবেক গভর্নর। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থাকাকালে তিনি বলেছিলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থের একটা জোট। এটা কোনও প্রতিনিধিত্বমূলক কিংবা গণতান্ত্রিকভাবে জবাবদিহিতামূলক সরকার নয়।’ সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। 

/এসএ/এমপি/