টিপিপি কি? কেন এটি তাৎপর্যপূর্ণ?


নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক নির্বাহী আদেশে ১২টি দেশের এ অংশীদারত্বের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে নিজের প্রথম সপ্তাহের কর্মদিবসে ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি।

এশিয়ার ক্রমবর্ধমান শক্তি চীনকে মোকাবিলায় টিপিপি ছিল ওবামা প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। ফলে টিপিপি বাতিলে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো। বহু আলোচনার পর এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন এটি অকার্যকর হয়ে পড়লে সেটা বরং এ অঞ্চলে চীনের অর্থনীতিকেই আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

টিপিপি কি?

যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের অংশীদারত্বমূলক বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি। চুক্তিতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৫ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

টিপিপি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। এ দেশগুলো বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এ চুক্তি এখনও কার্যকর হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসও এতে অনুসমর্থন করেনি। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এটি অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

TPP 03কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

টিপিপি’র লক্ষ্য এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ করা। তবে এ চুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের বিরোধিতা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবীদেরও এতে অসন্তোষ রয়েছে। বিরোধীদের মতে, এ চুক্তি শ্রমিকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদেরই বেশি সুবিধা দেবে। এতে মূলত বহুজাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই লাভবান হবে।

চুক্তিতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি বেশ কিছু বাণিজ্য আইন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে একটি একক বাজার তৈরিরও পরিকল্পনা ছিল। তবে পূর্ণ বাস্তবায়নের আগেই টিপিপি ছাড়লো এর প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক নাগরিক মনে করেন, টিপিপি চুক্তির কারণে কাজের ক্ষেত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল দেশে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দাবি, চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা বেশি সুবিধা পাবেন এবং মার্কিন অর্থনীতি প্রসারিত হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এক ভিডিও বার্তায় হোয়াইট হাউসে নিজের প্রথম কর্মদিবসেই টিপিপি বাতিলের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে, টিপিপি চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ‘কর্মসংস্থান হত্যাকারী’ এবং ‘স্বার্থের ধর্ষণকারী’।

টিপিপিবিরোধী আন্দোলনটিপিপি নিয়ে ভিন্নমত যুক্তরাষ্ট্রে

টিপিপি বাতিলের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যা করেছি, তা মার্কিন কর্মীদের জন্য অনেক বড় কিছু।’ তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাণিজ্য দূত রন ক্রিক। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি’কে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে চাকরিপ্রত্যাশীদেরই শুধু দেশে ফিরিয়ে আনবে না; এটা মার্কিন কৃষি ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করবে।’

রন ক্রিক বলেন, ‘আমরা এখন এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছি যারা ১৮ হাজারেরও অধিক পণ্যের ট্যারিফ কমাতে যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন তাদের পুরো ট্যারিফই বহাল থাকবে। এটা আমেরিকান কৃষক, পশু খামারের মালিক এবং ব্যবসাকে ধ্বংস করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ বাণিজ্য দূত বলেন, ‘এটা বিশ্বে একটি বৃহৎ শুল্কমুক্ত জোন তৈরি হওয়ার সমতুল্য। অথচ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, আমরা এতে অংশ নিতে চাই না।’

লাভবান হবে বাংলাদেশ

টিপিপি চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তি ছিল বাংলাদেশের। তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শঙ্কায় ২০১৫ সালে ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানায় বাংলাদেশ। কারণ এই চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনা শুল্কে তৈরি পোশাক রফতানি করতে পারবে। সেখানে বাংলাদেশকে একই পণ্যের জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টিপিপি বাতিলের ঘোষণায় লাভবান হবে বাংলাদেশ। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনবিসি।

/এমপি/