কাঁটাতারে আটকা পড়া ভালোবাসা!

Untitled-2মানুষের সীমানাহীন পৃথিবীকে কাঁটাতার আর সীমান্তে বিভক্ত করেই তৈরি হয়েছে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র। তবে মানুষে মানুষে সম্মিলনের সহজাত বোধ তাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। মাঝে মাঝেই সেই বোধকে উঁকি দিতে দেখা যায়। অনেক মানুষকেই দেখা যায়, জাতিরাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে ভিনদেশি মানুষের সঙ্গে সম্মিলিত হতে। তেমনই এক ঘটনা ঘটে ‘চিরবৈরী’ দুই দেশে ভারত আর পাকিস্তানের দুই নাগরিকের ক্ষেত্রে। ৫ বছর আগে রাষ্ট্রীয় পরিচয় কিংবা জাতীয়তার ঊর্ধ্বে উঠে তারা সম্মিলিত হয়েছিলেন পারস্পরিক ভালোবাসায়। তবে সেই ভালোবাসা মেনে নেয়নি জাতিরাষ্ট্রের আইন-সংবিধান। যেন রাষ্ট্রীয় বিদ্বেষের কাঁটাতারে আটকা পড়েছে ভালোবাসা!

বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে পাকিস্তানি যুবক আকবর দুরানি এবং ভারতীয় নারী সোফিয়ার ভালোবাসা আর বিরহের কথা। ভালোবাসার মানুষের টানে আকবর দুরানি ভারতেই বসবাস করছিলেন। কিন্তু ভালোবাসার বন্ধনকে অগ্রাহ্য করে ওই যুবককে ভিসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এবার তাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাচ্ছে দিল্লি। ইসলামাবাদও দাঁড়ায়নি তাদের পাশে।

আকবর দুরানি এবং সোফিয়ার মধ্যে ভালোবাসার শুরু ২০১১ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক ও স্কাইপির সাহায্যে তারা নিজেদের মধ্যে সংযুক্ত থাকতেন।

৩১ বছর বয়সী আকবর পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ প্রদেশের উখরির বাসিন্দা। আর সোফিয়ার বাড়ি ভারতের মধ্যপ্রদেশে। ২০১৩ সালে তারা সোফিয়ার শহর দিওয়াশেই বিয়ে করেন। এক বছর পর তাদের ছেলে আরিজের জন্ম হয়।

আকবর হিন্দুস্তান টাইমসকে জানান, সোফিয়ার ভালোবাসাই তাকে ভারতে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আর মা ভিসা নিয়ে দিওয়াশে যাই। সেখানে আমি সোফিয়ার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করি, আর সে সময়ই তারা আমাদের বিয়ের বিষয়ে সম্মতি দেন। তবে তাদের শর্ত ছিল, বিয়ের পর আমাকে তাদের সঙ্গে ভারতেই থাকতে হবে।’  

অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আকবর মধ্যপ্রদেশের একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু স্বল্পমেয়াদি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে অবস্থান করা আকবর ভারতের স্থানীয় পররাষ্ট্র দফতরে একটি দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদন করেন।

এ সম্পর্কে দুরান বলেন, ‘আমি বর্তমান ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই একটি দীর্ঘমেয়াদি ভিসার আবেদন করি। যেখানে আমি একজন ভারতীয় নারীকে বিয়ের তথ্য-প্রমাণও দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে ভিসা দেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়, সেদিনও আমি ভিসার তথ্য জানতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দফতরে যাই। সেখানেই আমাকে ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারতে অবস্থান করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়।’

আকবরকে ২০১৫ সালের আগস্টে ভিসা আইন অমান্য করার ‘অপরাধে’ এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই পাকিস্তানি যুবক আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের ৮ আগস্ট আমাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পাকিস্তানি দূতাবাসে আমার ভিসার তথ্য চেয়ে একটি পুলিশ স্টেশনে পাঠানো হয়।’ তিনি জানান, ওই তথ্য পাঠাতে পাকিস্তানি দূতাবাসের ছয় মাস সময় লাগে।

আকবরের আশঙ্কা, হয়তো তিনি আর নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবেন না! তিনি জানান, সোফিয়া ও তাদের দুই বছরের সন্তানকে আকবরের সঙ্গে পাকিস্তানেও যেতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। আবার তার অবর্তমানে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত আকবর।

কান্না বিজরিত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘তারা (সোফিয়া ও আরিজ) আমাকে বিদায় জানাতে অমৃতসরে এসেছে। তবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, আমি হয়তো আর কখনও ভারতে আসার ভিসা পাবো না। যেহেতু ভারতের ভিসা আইন অনুযায়ী, ওই আইন অমান্য করলে ভিসা দেওয়া হয় না।’

এমনকি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষও সোফিয়া ও আরিজকে ভিসা দেবে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত নন আকবর।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর পর আমাকে জোরপূর্বক পরিবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। আমার জীবনে এটি সুনামির চেয়ে কম নয়।’

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, ডন।

/এসএ/বিএ/