ইসরায়েলবিরোধী প্রতিবেদন ঘিরে জাতিসংঘ কর্মকর্তার পদত্যাগ

রিমা খালাফইসরায়েলবিরোধী প্রতিবেদন ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়ার পর জাতিসংঘের পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক কমিশনের প্রধান রিমা খালাফ পদত্যাগ করেছেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জাতিসংঘ মহাসচিব খালাফকে তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপরই সংবাদ সম্মেলনে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন খালাফ। অবশ্য, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র দাবি করেছেন, প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নয়, দায়িত্বে অবহেলাজনিত কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের পশ্চিম এশিয়াবিষয়ক কমিশনটির নাম ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়া (ইএসসিডব্লিউএ)। ১৮টি আরব রাষ্ট্র নিয়ে কমিশনটি গঠিত। বুধবার লেবাননভিত্তিক এ কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল জাতিবিদ্বেষী শাসন বজায় রেখেছে বলে অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের কোনও কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে এ অভিযোগ করেছে।
শুক্রবার বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে রিমা খালাফ জানান প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিতে রাজি না হওয়ায় চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনটি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে ইসরায়েল ও মিত্র দেশগুলো যে জাতিসংঘের মহাসচিবের ওপর চাপ তৈরি করবে এবং তা প্রত্যাহার করতে বলবে তা ধারণার মধ্যেই ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে মহাসচিব আমাকে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। আমি তাকে তার অবস্থান নিয়ে ভাবতে বললাম কিন্তু তিনি অনড় থাকলেন। পরে আমি জাতিসংঘ থেকে পদত্যাগের কাগজপত্র তার কাছে জমা দিই।’
শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক দাবি করেন, প্রতিবেদনটির বিষয়বস্তুর কারণে খালাফকে পদত্যাগ করতে বলা হয়নি; বরং প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে না পারায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি বিষয়বস্তুর ব্যাপার নয়, প্রক্রিয়াজনিত ব্যাপার।’

ইসরায়েলকে ‘জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করা প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের সাবেক মানবাধিকারকর্মী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড ফাল্কের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে। তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় ফাল্ক বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলি শাসন ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক, জাতিবিদ্বেষী এবং জাতিগত নির্মূলকরণের চরিত্র ধারণ করে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্যও দোষারোপ করেছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও ক্ষোভ জানিয়েছে। তারা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি এক বিবৃতিতে জানান, ‘জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিবেদন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে সঠিক কাজ করেছে। তবে তাদের অবশ্যই আরও এগিয়ে ওই প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তবে এক প্রতিবেদনেই ইসরায়েলের ‘জাতিবিদ্বেষী’ চরিত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাস্তব প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয় যে, ইসরায়েল জাতিবিদ্বেষী অপরাধ করছে। তবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আদেশের পরই এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর জাতিসংঘ মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মহাসচিবের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।

/এফইউ/