এরদোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর ভোটকে বৈধ বলছে তুরস্কের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ

এরদোয়ানতুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বিস্তৃত করা এবং মেয়াদ বাড়ানোর লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফলকে ‘বৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। গণভোটের ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলার পর নির্বাচন কর্তৃপক্ষের প্রধান সাদি গুভেন সোমবার এ ফলাফলকে বৈধ বলে দাবি করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে খবরটি জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনার জন্য রবিবার গণভোটের আয়োজন করা হয়। একজন প্রেসিডেন্ট যেন আরও একযুগ ক্ষমতায় থাকতে পারেন এবং অগাধ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন তার জন্য জনতার কাছে ‘হ্যা’ ভোট চান বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের প্রশাসন। গণভোটের ফলাফলে দেখা যায় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছে।  আর তাতে ক্ষোভ জানান প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি)-সহ অন্য বিরোধীরা। গণভোটে স্ট্যাম্পবিহীন ব্যালট ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন তারা।  ৬০ শতাংশ ভোট পুনর্গণনারও দাবি জানায়, সিএইচপি।

এই প্রেক্ষাপটে, সোমবার (১৭ এপ্রিল) সাদি গুভেন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, স্ট্যাম্পবিহীন ব্যালটগুলো হাই ইলেক্টোরাল বোর্ড থেকেই প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা বৈধ।  আগের নির্বাচনও একই প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

৯৯.৪৫ শতাংশ ভোট গণনায় এরদোয়ানের সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ‘না’ ভোট পড়েছে প্রায় ৪৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।  গণভোটে জয়ের পর এরদোয়ানের সমর্থকরা বড় শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় পতাকা নিয়ে উল্লাস শুরু করে। অন্যদিকে এরদোয়ানবিরোধীরা ইস্তাম্বুলে হাড়ি-পাতিল পিটিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তুরস্কের তিন বড় শহর ইস্তানবুল, আঙ্কারা ও ইজমিরের লোকজন সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিপক্ষে অর্থাৎ ‘না’ ভোট দেয়। সবাইকে ভোটের ফলাফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এরদোয়ান। ভোটের ফলাফলের ব্যাপারে সোমবার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের রায় দেওয়ার কথা রয়েছে।

সংবিধানে সংশোধনী আনা হলে এরদোয়ানের ক্ষমতা বহুলাংশে বাড়বে। তিনি নিজের ইচ্ছায় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে ও তাদের পদচ্যুত করতে পারবেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদও তার মর্জির বাইরে যেতে পারবে না। ১৯২৩ সালে প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর সাংবিধানিকভাবে কোনও একক ব্যক্তির হাতে এমন ক্ষমতা এর আগে আসেনি।

নতুন প্রস্তাবিত সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাজ করতে একাধিক ভাইস-প্রেসিডেন্টের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। প্রেসিডেন্ট একাই জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন। পার্লামেন্ট আর মন্ত্রীদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারবে না। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন।

প্রেসিডেন্টের বিচারের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ পার্লামেন্ট সদস্যের সমর্থন লাগবে। পার্লামেন্ট সদস্যের সংখ্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একই দিনে হবে। প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩ নভেম্বর ২০১৯। 

/এফইউ/