ভয় আর দমনপীড়নের জালে আটকা পড়েছে বাংলাদেশের ভিন্নমতাবলম্বীরা

nonameমানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মনে করছে, জঙ্গিবাদের ভীতি আর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের জালে আটকা পড়েছে বাংলাদেশের ভিন্নমতাবলম্বীরা। ভিন্নমতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওই সংগঠন। দমনমূলক কৌশল ও নতুন আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তুলেছে অ্যামনেস্টি।

মঙ্গলবার (২ মে) অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ভিন্নমতাবলম্বীদের পরিস্থিতি তুলে ধরে উদ্বেগ জানানো হয়। সেইসঙ্গে মুক্ত মতের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ এবং যারা হুমকিতে রয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়।

‘কট বিটুয়িন ফিয়ার এন্ড রিপ্রেশন: অ্যাটাকস অন ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইন বাংলাদেশ’ (ভয় আর দমন-পীড়নের জাল: বাংলাদেশে স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর আঘাত) শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বেশ কয়েকজন সেক্যুলার ব্লগারকে হত্যার পরও জঙ্গি সংগঠনগুলো দায়মুক্তির আমেজে রয়েছে। চার বছরে মাত্র একটি মামলায় অভিযোগ গঠন করতে দেখা গেছে। নিয়মিত হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে অ্যাকটিভিস্টদের। কর্তৃপক্ষ তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর কেউ কেউ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

অ্যামনেস্টির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশ সরকার জনপরিসরের বিতর্ক ও সমালোচনা ঠেকাতে দমনপীড়ন চালিয়েছে। মিডিয়াকর্মীদের হয়রানি ও কর্মক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পাশাপাশি দমনমূলক আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশবিষয়ক গবেষক ওলফ ব্লমকভিস্ট বলেন, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা আর রাষ্ট্রীয় দমনের মাঝামাঝি পড়ে সেক্যুলারদের কণ্ঠস্বর ক্রমাগত রুদ্ধ হচ্ছে। সরকার যে কেবল জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে তা নয়, তারা যে ধরনের হুমকি পাচ্ছে তার জন্য উল্টো ভুক্তভোগীদেরই দায়ী করা হচ্ছে। দমনমূলক আইনের মাধ্যমে ব্লগার ও সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ বিবেচনা করা হচ্ছে।’

প্রতিবেদনে ২০১৬ সালে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দীন সামাদ হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, নাজিমুদ্দিনের মৃত্যুর জন্য সরকার তার ওপরই দোষ চাপাতে চেয়েছে। নাজিমুদ্দিনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্যের কথাও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি।

জঙ্গি হামলা কিংবা হুমকির মুখে পড়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে অ্যামনেস্টির কাছে অভিযোগ করেন কয়েকজন ব্লগার। তাদের কেউ কেউ নিরাপত্তার স্বার্থে দেশ ছাড়ার কথাও জানিয়েছেন। কেবল তাই নয়, সেক্যুলার ধারার লেখার কারণে তাদেরকে হেনস্থার শিকারও হতে হয়েছে। ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কয়েকবার হুমকি পাওয়া এক ব্লগার অ্যামনেস্টিকে বলেন, ‘আমি কয়েকবার সরকারের কাছে সহায়তা চাইতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে সহায়তা দিতে রাজি হননি।’

সমালোচনা বন্ধে বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইন ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে এই আইন বাতিলের পক্ষে মত দেয় অ্যামনেস্টি। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পদক্ষেপের ব্যাপারেও উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি।

/এফইউ/বিএ/