কনিষ্ঠতম ফরাসি প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে নবজাগরণের স্বপ্ন

ম্যাখোঁ
দায়িত্ব গ্রহণের দিনেও সাম্য-মৈত্রী ও স্বাধীনতার শিক্ষাকে সামনে নিয়ে আসলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নেওয়ার পর দেওয়া উদ্বোধনী ভাষণে তিনি সেই ফরাসি বিপ্লবের শিক্ষাকে গোটা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দাবি করেন। ম্যাক্রোঁর প্রতিশ্রুতি, আলোকায়নের (এনলাইটেনমেন্ট) ওই শিক্ষার প্রেরণায় ফ্রান্স, ইউরোপসহ সারা বিশ্বে নবজাগরণ আসবে। ফিরবে ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি। নির্বাচিত হওয়ার পর দেওয়া বিজয় ভাষণেও একইভাবে ফরাসি বিপ্লবের প্রেরণায় নতুন দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।
উদ্বোধনী ভাষণে ইনলাইটেনমেন্ট যুগের ফ্রান্সকে সামনে এনে অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে শক্তিশালী এক ফ্রান্স গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন ম্যাক্রোঁ। এজন্য সমাজের বিভক্তি দূর করে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের এক নবযুগ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখান তিনি। ম্যাক্রোঁ তার ভাষণে বলেন,  ‘ইউরোপসহ সারা বিশ্বের এমন এক ফ্রান্সকে দরকার, যে ফ্রান্স পূর্বের যে কোনও সময়ের থেকে জোরালোভাবে স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলতে পারবে।’
ম্যাক্রোঁ ইউরোপসহ সারা বিশ্বকে আলোকায়নে (এনলাইটেনমেন্ট) উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ‘ফরাসিরা সবসময় স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের যে শিক্ষা দিয়ে এসেছে সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে বিশ্ব। কয়েক দশক ধরে ফ্রান্স নিজেকে নিয়েই সন্দিহান ছিল। তবে আগের চেয়ে এখন ফ্রান্সকে আরও বেশি করে বিশ্ব ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রয়োজন। আমার ম্যান্ডেট ফ্রান্সের জনগণকে তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে বলে আশা করি।’

ম্যাক্রোঁর প্রতিশ্রুতি, ‘আতঙ্ক আর উদ্বেগ ছাপিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। একসঙ্গে আমরা অন্যদের দৃষ্টান্ত হব। তারা জানবে, কিভাবে গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধ ও নীতিমালাগুলোকে দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করা যাবে।’

ম্যাক্রোঁর মতে, তাকে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে ফরাসিরা ‘আশা’ কে বেছে নিয়েছে। তার মতে ‘আশাবাদ’কে জোরালো করতে ‘সমাজের ভেতরে ছড়িয়ে থাকা বিভক্তি আর অনৈক্যের ক্ষতগুলো দূর করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি ফরাসিরা আমার কাছে অনেক কিছু আশা করছে। ফ্রান্সের স্বার্থ এবং একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থান থেকে কেউ আমাকে সরাতে পারবে না।’ ম্যাখোঁর দাবি, তিনি জনগণকে বোঝাবেন যে ‘ফ্রান্সের ক্ষমতা কমছে না-আমরা বড় এক রেনেসাঁর দ্বারপ্রান্তে আছি। আমাদেরকে অবশ্যই সমাজের বিভক্তি ও ফাটলগুলো জয় করতে হবে।’

রবিবার বিদায়ী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে এলিসি প্রাসাদে প্রেসিডেন্টের শপথ নেন ম্যাক্রোঁ। শপথ গ্রহণের পর তাকে লিজিয়ন অব অনার প্রদান করা হয়। ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ের পর দেওয়া ভাষণেও ফরাসি বিপ্লবের সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার ঐতিহ্যকেই সামনে আনেন ম্যাক্রোঁ। ওইদিন তিনি বলেছিলেন, আলোকায়নের (এনলাইটেনমেন্ট) সেই ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনার দিন এসেছে। বিজয় ভাষণে নতুন দিনের সেই ইতিহাসে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন ফরাসি ইতিহাসের কনিষ্ঠতম এই প্রেসিডেন্ট।

/এফইউ/বিএ/