‘আমরা বিচার চাই’

লন্ডনবাসীদের বিক্ষোভলন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ সেখানকার জনগণ। কেনসিংটন টাউন হল, হোয়াইট হল, ডাউনিং স্ট্রিটসহ মধ্য লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। তারা এ ঘটনার জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করছেন। লন্ডনবাসীদের একটাই দাবি, ‘আমরা বিচার চাই।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে। রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের তাণ্ডবে ভবনটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এতে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তবে এখনও প্রায় ৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে লন্ডন মেট্রোপলিট্রন পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে, সব মরদেহ পাওয়ার ব্যাপারে তারা নিজেরাই নিশ্চিত নন। কোনও কোনও নিহতের শনাক্তকরণও সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুনের ঝুঁকি শনাক্ত করে থেরেসা সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলেও মনে করছেন সেখানকার মানুষেরা।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গ্রেনফেল টাওয়ার

এ অগ্নিকাণ্ডে সরকার ও প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার প্রতিবাদে শুক্রবার লন্ডনবাসীরা কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি টাউন হল ঘিরে ফেলেন। তারা কাউন্সিলরদের কাছে এ ঘটনার জবাব দাবি করেন।

৩৯ বছর বয়সী ক্যারোলিন হিল বলেন, ‘আমরা লন্ডনবাসীরা এ ঘটনার পর এ নিয়ে একটি স্পষ্ট অবস্থানের জন্য এখানে জড়ো হয়েছি। জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া কাউন্সিলের দায়িত্ব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থায় কাউন্সিল মৌলিক মানবাধিকারকে অবহেলা করেছে। লোকজন নিজ ঘরেই নিহত হয়েছেন।’   

‘আমরা বিচার চাই’ স্লোগান দিতে দিতে এক পর্যায়ে ৫০-৬০ জন বিক্ষোভকারী কেনসিংটন এ্ন্ড চেলসি টাউন হলের ভেতর ঢুকে পড়েন।

লাইলা নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ মানুষের আশা ভঙ্গ হয়েছে। তারা এখন আর ৯৯৯ থেকে সাহায্যের আশা করেন না। তারা হোয়াটস অ্যাপে আপনজনদের কাছে চিরবিদায় জানাতে বাধ্য হন।’  

পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিক্ষোভ মিছিল

তিনি আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করা যায় না। তাদের বিশ্বাস করা কোনও মানেই হয় না। আমার বলার ভাষাও নেই। আমারও সন্তান আছে। আপনি কি কখনও কোনও শিশুকে বহুতল ভবনের জানালা থেকে তার মা-বাবার সঙ্গে মৃত্যুভয়ে চিৎকার করতে দেখেছেন?’

বিক্ষোভ শুধু কেনসিংটন টাউনেই সীমিত ছিল না। মধ্য লন্ডনে ক্ষুব্ধ জনগণের মিছিল হোয়াইট হল থেকে ডাউনিং স্ট্রিট এবং পরে অক্সফোর্ড স্ট্রিট পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করেছে। তারা স্লোগান দেন, ‘বিচার নেই, শান্তি নেই’, ‘আমরা বিচার চাই’।

বিক্ষোভ মিছিল

বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেওয়া এক নারী বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসেছি, কারণ ওই ভবনের সঙ্গে আমাদের মুখ থেকে কান্নার ভবনটিও ঝরে পড়ছে।’ কাছেই দাঁড়ানো অপর এক লোক বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার জবাব চাই। আমরা বিচার চাই। যুক্তরাজ্যে এমনটা হতে পারে না।’

এদিকে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে প্রথমবারের মতো স্থানীয় জনগণের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকেও ঘেরাও করে জনগণ। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তিনি দুবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলেও আক্রান্ত অধিবাসীদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। আক্রান্তদের খাবার, আশ্রয় ও জরুরি সাহায্যের জন্য থেরেসা মে কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি টাউন হল কাউন্সিলে ৫০ লাখ পাউন্ড বরাদ্দ করেছেন।  

ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ এবং প্রিন্স চার্লসও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রাণী আক্রান্তদের কাছে এ ঘটনার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।

/এসএ/