কাতারে ‘অবরুদ্ধ ঈদ’ উদযাপন, জনমনে বিচ্ছেদের বেদনা

সৌদি আরবসহ ৬ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের বাস্তবতায় ‘অবরুদ্ধ ঈদ’ উদযাপন করছে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের ওই কূটনৈতিক সঙ্কটের অভিঘাত দেখা গেছে কাতারের আয়োজনে। আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশে থাকা স্বজনরা আটকা পড়েছেন অবরোধে। কাতারবাসী রাজনীতিকেই দুষছেন মানুষে মানুষে বিভক্তির কারণ হিসেবে।

কাতার-১

৫ জুন সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইনসহ ৬ দেশ। এতে কাতারের সঙ্গে ওই আরব দেশগুলোর যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের আল মেরি গোষ্ঠী এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিস্তৃত বংশের একটি। সৌদি আরব, কাতারসহ বিভিন্ন আরব দেশে তাদের পরিবারে সদস্যরা থাকেন। আলি আল মেরি বলেন, ‘কাতারের উপর এই অবরোধের কারণে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনৈতিক যুদ্ধ নেতারা করেন কিন্তু ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে।’

কাতারের জনগণ তাদের ওপর রাজনৈতিক ওই অভিঘাতকে ভালো চোখে দেখছেন না। তারা মনে করছেন, রাজনীতি মানুষের সমাজে বিভাজন তৈরি করেছে।

কাতার-২

কয়েকবছর আগে কাতারি নারী ওয়াফা বাহরাইনের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তানও বাহরাইনের পাসপোর্টধারী। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে কাতারেই বসবাস করছিলেন ওয়াফা। কিন্তু কূটনৈতিক সংকটে তিন শিশু সন্তানকে বাহরাইনে ফিরে যেতে হবে, সঙ্গে যেতে পারবেন না তাদের মা। ফলে বিচ্ছেদের আশংকায় থেকেই ঈদ কাটাতে হচ্ছে এই পরিবারকে। বাহরাইন না গিয়ে কাতারের নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টার করছে সন্তানরা। ওয়াফা বলেন, তারা জানেই না বাহরাইন কেমন। তারা সেখানে কখনোই যায়নি।’

সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্ত অবাক করেছে কাতারের অনেক নাগরিককে। খালিদ আল হাজিরি নামে এক কাতারি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্তে আমি খুবই আঘাত পেয়েছি। আবু ধাবিতে থাকা আমার আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না আমি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য আরব বিশ্বে আলাদা কোনও দেশ নেই। আমরা্ সবাই এক। কিন্তু রাজনীতি আজ আমাদের আলাদা করে দিয়েছে।’ কবে এই সংকটের সমাধান হবে তা জানেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও ভাবিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে।’ তবে এই ঘটনায় কাতারি নাগরিকরা আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন খালিজি।

কাতার-৩

কুয়েতি নাগরিক আব্দুল্লাহ আল ওতাইবি মনে করেন, এই সংকট সমাধার আরব নীতিতেই হবে। কাতারে শুধু ঈদ করতেই এসেছেন তিনি। বোঝাতে চেয়েছেন আরব বিশ্বের সবাই এক। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে আলাদা করার কিছু নেই। আমরা আগেও এক ছিলাম, পরেও এক থাকবো।’ কুয়েতের আমির এই চলমান সংকট সমাধানে দেশগুলোর মাঝে মধ্যস্থতা করছেন।

এর মাঝেও কাতারের নাগরিকরা স্বাভাবিকভাবে ঈদ উদযাপন করার চেষ্টা করছে। নামাজের পর সকাল থেকেই বিনোদনকেন্দ্র ও জনপ্রিয় স্থানগুলোতে লোক মাগম হতে শুরু করে। বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে থাকেন মসুল্লিরা। কাতারা নামের একটি গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শো দেখতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। অনেক বিনোদনের মাঝে ছিলো আতশবাজিও।

/এমএইচ/বিএ/