প্রয়োজনে দলীয় সমর্থকরা হাতে অস্ত্র তুলে নেবে: মাদুরো

2953

ভেনেজুয়েলায় গত তিনমাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মার্কিন ষড়যন্ত্র বলছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে  সরকার। প্রেসিডেন্ট মাদুরো এই প্রেক্ষাপটে হুঁশিয়ার করেছেন, সরকার রক্ষায় প্রয়োজনে তার দলীয় সমর্থকরা অস্ত্র হাতে তুলে নেবে।

ভেনেজুয়েলায় চলছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট। ৫৪ বছর বয়সী সোশালিস্ট নেতা নিকোলাস মাদুরোর পদত্যাগ দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানী কারাকাসে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন সেখানে রাজনৈতিক সহিসংতায় নিহত হয়েছেন। ৩০ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক প্রচারণা মিছিলে তিনি সোমবার বলেন, তার পূর্বসুরী হুগো চ্যাভেজের ‘বলিভারিয়ান বিপ্লব’ রক্ষায় লড়াই করে যাবেন তিনি।  মাদুরো  বলেন, ভেনেজুয়েলায় যদি অশান্তি ও সহিংসতা শুরু হয়ে যায়্ এবং বলিভারিয়ান বিপ্লব ধ্বংস করা হয়। তবে আমরা যুদ্ধে নামবো। আমরা হার মানবো না, প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নেবো।’

তার এই বক্তব্যের পর তিন মাস ধরে চলা আন্দোলন আরও খারাপ দিকে মোড় নেয়। সুপার মার্কেট, বোকারি, খাবারের দোকানসহ ৬৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চলে। সোমবার রাতে শুরু হওয়া এই লুটতরাজ চলে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত।  এদিন একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি হেলিকপ্টার নিয়ে কারাকাসে সর্বোচ্চ আদালতে হামলা চালান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে তাকে অস্কার পেরেজ নামের গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে হেলিকপ্টারটিকে শহরের ওপর দিয়ে চক্কর কাটতে দেখা যায়। এর পরপরই বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তবে সেখানে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

 মারাকার বাসিন্দা রদ্রিগো রুজ বলেন, ‘আমি এমন অবস্থা কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে যুদ্ধ চলছে। আমি ঘুমোতে যাওয়ার আগেই বিকট আওয়াজ পাই আর এখনও এটা থামেনি।’ তিনি জানান, ওই স্থানে তখন কোনও পুলিশ ছিলো না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, এই বিশৃঙ্খলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ। চিকিৎসকরা তাকে ‘ব্রেইনডেড’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকগুলো সুপারমার্কেট লুট করেছে আন্দোলনকারীরা। ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ও পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেসময়।  সোমবার রাতে কারাকাসে পৃথক এক ঘটনায় এলাকাবাসীর হামলার শিকার হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা ওই স্থানে কারাকাসের পূর্বাঞ্চলে একটি এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এরপর নিকটবর্তী ভবন থেকে তাদের উপর গুলি চালানো হয়।

২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাপ্রিলেসকে হারিয়ে জয়ী হন বামপন্থী নিকোলাস মাদুরো। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে  প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কাপ্রিলেসকে মিরান্দা রাজ্যের গভর্নরের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে কাপ্রিলেসের দাবি এ বহিষ্কারাদেশ ‘অসাংবিধানিক’। গত ২৯ মার্চ বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর তিনদিন পর ওই রায় পরিবর্তন হলেও সংঘর্ষ থামানো যায়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, মাদুরো জোর করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন।

বিপরীতে মাদুরোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এই আন্দোলন চলছে। তার সরকার উৎখাতে অভ্যুত্থান ঘটাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা ধ্বংস হয়ে গেলে অনেক বড় শরণার্থী সংকট তৈরি হবে।’ ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুনুন, এই পরিস্থিতি থামানোর দায়ভার আপনার।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

/এমএইচ/বিএ/