না বাংলাদেশ, সত্য বলার মানে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’ নয়: এইচআরডব্লিউ






স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশে শত শত ‘গোপন আটক’ আর ‘গুম’র অভিযোগকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ‘নেতিবাচক প্রচারণা’ দাবি করলেও সংস্থাটি তাদের অভিযোগকে সত্য বলে দাবি করেছে।  ‘তিনি আমাদের কাছে নেই: বাংলাদেশে গোপন আটক আর গুম' শিরোনামে প্রকাশিত এইচআরডব্লিউ-এর বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে ওই মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা। নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশের উদ্দেশে বলছে, সত্য বললেই তাকে নেতিবাচক প্রচারণা বলা যায় না।



noname

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এইচআরডব্লিউ-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে কয়েকশ' মানুষ গুম কিংবা গোপন আটকের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধী নেতাও রয়েছেন। সংস্থাটির প্রতিবেদনে অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে, যারা কেবল ২০১৬ সালেই গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা একমাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে। ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এরকম ৪৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে, বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাদের কাছে তথ্য থাকার দাবি করে সংস্থাটি বলছে, এরকম আটক ২১জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে আর নয়জনের কোন তথ্যই আর জানা যায়নি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করেছে এই সংগঠনটি। তাদের বর্তমান প্রতিবেদনটিও সেই প্রচারণার অংশ।’ এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এইচআরডব্লিউ তাদের বিবৃতিতে বলছে, ‘না বাংলাদেশ, সত্য বলার মানে ‘নেতিবাচক প্রচারণা’ নয়।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (এইচআরডব্লিউ) এত গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন?’

বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে এইচআরডব্লিউ।  তারা বাংলাদেশের বক্তব্যের সত্যতা অস্বীকার করে বলছে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘ কখনও বাংলাদেশের কথিত গুমের ব্যাপারে কিছু বলেনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, তাদের মতোই গুম-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপের ক্ষেত্রেও বারবার অভিযোগগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ এ ব্যাপারে 'কঠোর সতর্কতা' জারি করেছে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ' নানা কারণে আমাদের দেশে মানুষ গুম হয়। কোনো সময় ব্যবসায়িক কারণে, যখন দেনা হয়ে যায় তখন লুকিয়ে থাকে। কখনো বা সামাজিক কারণে লুকিয়ে থাকে। কখনোবা বড় বড় অপরাধী যখন দেখে, পাপের ভার এমনই হয়ে গেছে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার খোঁজ শুরু করেছে, সেই সময় সে আত্মগোপনে যায়।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, এগুলো যদি গুম বলতে হয় তাহলে ‘গুমের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করতে হবে’। তার দাবি, 'গুমের যে খবর আছে, এর অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করেছে। যারা ব্যবসায়িক কারণে গুম হয়েছে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করেছে।'

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ হাজির করেছে তারা। ডিবি, র‍্যাব কিংবা প্রশাসনের নামে তাদের কোথায় থেকে কখন কীভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর স্বজনদের পক্ষ থেকে এদের খোঁজ জানতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক রাখার কথা অস্বীকার করেছে। বিনা বিচারে দিনের পর দিন আটক রাখার পর এদের কাউকে কাউকে আদালতে হাজির করা হয়েছে আদালতে, কাউকে কাউকে চুপ থাকার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ গুম বা ‘ক্রসফায়ার’-এর শিকার হয়েছেন। 
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে নিখোঁজ পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ একশজনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সেখানে পুলিশের কাছে করা অভিযোগ ও অন্যান্য আইনি কাগজপত্রও রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে এসব অভিযোগ তদন্ত করার আহবান জানিয়ে এইচআরডব্লিউ বাংলাদেশ সরকারকে  ন্যায়বিচার নিশ্চিতের তাগিদ দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগগুলো তদন্তের আওতায় না নিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
/বিএ/