আরব সাগরে ছুড়ে দেওয়া হলো ২৮০ শরণার্থীকে

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ২৮০ জন ইথোপিয়ান শরণার্থীকে আরব সাগরে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২১০ জন সমুদ্র থেকে উঠে আসতে সমর্থ হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন। আর নিখোঁজ শরণার্থীর সংখ্যাও ৩৫। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা এই মর্মান্তিক খবর জানিয়েছে।
শরণার্থীদের ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে পানিতে

বুধবার ১২০ জনকে সাগরে নিক্ষেপের পর বৃহস্পতিবার আবারও ১৬০ জনকে সাগরে নিক্ষেপের খবর জানিয়েছে জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা। বুধবারের ছুড়ে দেওয়া ১২০ জনের মধ্যে ৬৯ জন প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন। আর বৃহস্পতিবার ১৬০ জনের মধ্যে ১৪১ জন ডুবে যাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকী ১৯ জনের মধ্যে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন।

বৃহস্পতিবার রাতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, দুইজন নারী ও দুইজন পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছেন তারা। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন। সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠে আসা এমন ৫৭ জনকে চিকিৎসাসেবা ও খাবার সরবরাহ করছে জাতিসংঘ। পালিয়ে গেছেন ৮৪ জন অভিবাসী। 

দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত হর্ন অব আফ্রিকা (সোমালিয়া-ইথোপিয়া-সুদান) থেকে তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোতে অভিবাসনের জন্য ইয়েমেন নৌ-পথের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট। যুদ্ধকবলিত হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার অভিবাসী সেই পথ ব্যবহার করেই পাড়ি জমান ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে।  

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার দাবি, ১৬০ জন ইথিওপিয়ান অভিবাসীকে জোর করে আরব সাগরে এক নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। সংস্থাটির ইয়েমন প্রধান লরেন্ত দে বোক বলেন, ‘এটা সত্যিই খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। তারা পাচারকারীদের সঙ্গে নৌকায় ছিলো। কিন্তু ডাঙায় পৌছানোর আগেই তাদের নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকজন হারিয়ে যায়। আর বাকিদের কবর দেন বেঁচে যাওয়ারা।

বেঁচে গেলেও এই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকে। দে বোক বলেন, এই পরিস্থিতি নতুন। প্রথমবার আমরা এমন অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলছি যাদের জোর করে নৌকা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের কারণেই পাচারকারী চক্ররা এতটা উগ্র হওয়ার সাহস পেয়েছে। আর এ কারণেই দুর্ভোগ নেমে এসেছে শরণার্থীদের। 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রধান উইলিয়াম লেসি সুইং বলেন, ‘এই পৃথিবীতে আসলে কিছুই ঠিক নেই। যেখানে অসংখ্য শিশুকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হচ্ছে সেখানে কিছুই ঠিক থাকতে পারে না।’ আফ্রিকা থেকে ইয়েমেনের রুট খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করেন তিনি।

ইয়েমেনে সৌদি জোট সমর্থিত সরকার ও ইরান সমর্থিত হাউতি গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৪ হাজারেরও বেশি। এজন্য অনেকেই ইয়েমেন ছেড়ে চলে আসতে চাইছেন। শরণাপন্ন হচ্ছেন পাচারকারীদের কাছে

আর বুধবারের ঘটনায় পাচারাকারীরা প্রায় ১২০ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে সাগরে ফেলে দেয়। সৈকতেই দাফন করা হয় ২৯জনকে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ২২ জন। তাদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৬এর কাছাকাছি।

দে বোক আল-জাজিরাকে বলেন, জিবুতি, ইখিওপিয়া ও সোমালিয়ার পাচারকারীরা ইয়েমেনের পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে এসব কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। হর্ন অফ আফ্রিকা ও ইয়েমেনের এই সরু সাগরপথকেই ব্যবহার করছে তারা। এদিক দিয়েই ধণী আরব দেশগুলোকে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে হাজার হাজার মানুষ।

ইয়েমেনে শরণার্থীরা যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে সুদান, মিসর ও লিবিয়াতেও পালিয়ে গেছেন। গত বছর ১ লাখা ১১ হাজার ৫০০ এরও বেশি অভিবাসী ইয়েমেন উপকূলে আসে। এর আগের বছরও আসে ১ লাখের বেশি। এবছরও প্রায় ৫৫ হাজার অভিবাসী ইয়েমেনে আসে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা। 

জাতিসংঘ মহাসচিব এর মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, এই সংকট সমাধানে অবশ্যই্ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।  আমাদের আরও বৈধ পথ তৈরি করতে হবে এবং সহজ করতে হবে।’ অসহায় এই মানুষগুলোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

জর্ডানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই পাচারকারীদের আটক করা দরকরা। কিন্তু ইয়েমেন এখন যুদ্ধরত দেশ। তাই তাদের গ্রেফতারে পুলিশের সংখ্যা সীমিত। তাই কাজটা খুবই কঠিন।

/এমএইচ/বিএ/