বার্সেলোনা হামলা: হতাহতের শিকার ২৪ দেশের নাগরিক

বার্সেলোনায় গাড়ি হামলায় অন্তত ২৪টি দেশের নাগরিক হতাহতের শিকার হয়েছেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এই হামলায় ১৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাতালান কর্তৃপক্ষের বরাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

4698

কাতালান কর্তৃপক্ষ জানায়, হামলায় তিন বছর বয়সী এক শিশু মারা গেছে। তবে তার জাতীয়তা এখনও জানা যায়নি। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে তাদের কোনও নাগরিক হতাহতের খবর পায়নি তারা। তবে ম্যানচেস্টার হামলায় বেঁচে যাওয়া ক্রিস পাওলি সেসময় স্ত্রীসহ স্পেনে অবস্থান করছিলেন।ম্যানচেস্টার ইভনিংকে দেওয়া সাক্ষাতাকারে ক্রিস জানান,  তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না ৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সন্ত্রাসী হামলায় পড়লেন । বৃহস্পতিবারের হামলা নিয়ে তিনি বলেন, সেখানে চারপাশে শুধু পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স ছিলো। দোকানগুলো বন্ধ করে ফেলছিলো।   

ফ্রান্স জানিয়েছে তাদের ২৬ জন নাগরিক আহত হয়েছেন যাদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম লা ভ্যানগার্দিয়া জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে তিনজন জার্মানও রয়েছেন। 

বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিয়ের রিন্ডার্স এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন যে তাদের একজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া কেউ আহত হয়েছেন কিনা জানতে হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন তারা।

নেদারল্যান্ডস থেকে জানানো হয় তিনজন ডাচ আহত হয়েছেন। গ্রিসের এক কূটনীতিকও তাদের এক নারী ও তার দুই শিশু আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। চীন জানিয়েছে হংকংয়ের একজন সামান্য আহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও একজন সামান্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ বলেছেন, চারজন অস্ট্রেলিয়ার আহত হয়েছেন যাদের দুইজন নারীর অবস্থা গুরুতর। এখনও একজন অস্ট্রেলিয়ান নিখোঁজ রয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে সারারাত ধরেই যারা ইংরেজি, ইতালিয়ান ও ফরাসি বোঝেন তাদের হাসপাতালে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছিলো। কারণ অনেক বিদেশি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন যারা স্প্যানিশ বলতে পারেন না। রাতের মধ্যেই অনেক দেশই জরুরি হেল্পলাইন সেবা শুরু করে। নিকটবর্তী ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। প্রাণ বাঁচাতে খাবার ছেড়ে পালায় সবাই।

গার্ডিয়ান জানায়, খুব শিগগিরই নিহত ও আহতদের নাম প্রকাশ করবে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ। রাতের মধ্যেই বার্সোলোনার অনেক স্থান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়দের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অনেককে।

মোবাইল নেটওয়ার্কে  গোলযোগ থাকায় কাতালান কর্তৃপক্ষ সবাইকে ফোনের পরিবর্তে সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানানোর অনুরোধ করেছে। এই হামলাকে ঘিরে সেফটি চেক সার্ভিসও চালু করেছে ফেসবুক। 

হামলায় হতাহতদের স্মরণে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের লাইট বন্ধ রাখা হয়েছিলো। নিউ ইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে স্প্যানিশ পতাকার রংয়ের বাতি জালিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করা হয়।

স্পেনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বার্সেলোনার লাস রামব্লাসে পথচারীদের ভিড়ে ভ্যান উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১৩জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও ১০০ জন। এরপর স্থানীয় সময় মধ্যরাতের দিকে ক্যামব্রিলসের কাছে আরেকটি হামলার প্রচেষ্টা হলে পাঁচ সন্দেহভাজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে তা ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করে পুলিশ। ওই ঘটনায় সাতজন (ছয় পথচারী ও এক পুলিশ) আহত হয়। এই দুই হামলার আগে বৃহস্পতিবার সকালে আলকানার এলাকার একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। এতে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। এটিকে প্রথমে দুর্ঘটনা বলে মনে করা হলেও এখন পুলিশ ধারণা করছে তিনটি ঘটনার সংযোগ রয়েছে। 

 

/এমএইচ