ব্যাননের অপসারণ: কিছুই বললেন না ট্রাম্প, কেবলই 'ধন্যবাদ'

মুখ্য কৌশল প্রণেতা স্টিভ ব্যাননকে হোয়াইট হাউস থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও শুক্রবার (১৮ আগস্ট) থেকে এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড  ট্রাম্প। সেই নীরবতা ভেঙে শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে একটি টুইট করেছেন ট্রাম্প। টুইটে ব্যাননকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। স্বীকার করেছেন তার নির্বাচনকালিন অবদানের কথা। তবে ট্রাম্পের সেই টুইটার পোস্টে ব্যাননের অপসারণ কিংবা তার হোয়াইট হাউসে থাকাকালিন ভূমিকা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 
ট্রাম্প ও ব্যানন
যুক্তরাষ্ট্রের উগ্র রক্ষণশীল রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্ট নিউজ নেটওয়ার্কের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান-এর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব ছেড়ে ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দিয়েছিলেন ব্যানন। শুক্রবার তার অপসারণ ইস্যুতে ট্রাম্পের নীরবতার খবর প্রকাশ করেছিল সেই ব্রেইটবার্ট-ও। এদিন সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। এমনকি টুইটারেও ছিল না কোনও প্রতিক্রিয়া। অবশেষে শনিবার টুইটারে ব্যাননকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের টুইটে বলা হয়, ‘আমি স্টিভ ব্যাননকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। কুটিল হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যখন আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম তখন আমার প্রচারণা দলে ব্যানন যুক্ত হয়েছিলেন। খুবই দারুণ ছিল। ধন্যবাদ এস (স্টিভ ব্যানন)।’ উগ্র রক্ষণশীল রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্ট নিউজ নেটওয়ার্কের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান-এর আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব ছেড়ে ট্রাম্প প্রশাসনের মুখ্য কৌশল প্রণেতা হয়েছিলেন স্টিভ ব্যানন। ছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের সবথেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে স্টিভ ব্যাননের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার আভাস মিলছিল। ব্লুমবার্গসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছিল, মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হোয়াইট হাউজের পশ্চিম অংশের (ওয়েস্ট উইং) সঙ্গে দ্বন্দ্বে জাড়িয়ে পড়েছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতম এই ব্যক্তি।
ট্রাম্পের টুইটার পোস্টে ব্যাননের হোয়াইট হাউসের ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য নেই। 
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে ব্যাননের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ট্রাম্প দৃশ্যপটে উঠে আসার আগে মাঠের রাজনীতিতে তাকে পরিচিত করতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ট্রাম্পের উত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক এবং ভাবাদর্শগত কাঠামোর ভিত্তি স্থাপনে সাহায্য করেন ব্যানন।হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে রদবদলের অংশ হিসেবে শুক্রবার ব্যাননকেই মুখ্য কৌশল প্রণেতার পদ থেকে অপসারণ করা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ট্রাম্প নতুন চিফ অব স্টাফ জন এফ কেলিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছেন যার আওতায় তিনি ব্যাননকে অপসারণ করতে পারেন। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে চলমান কোন্দল ও অস্থিরতা ঠেকাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্রেইটবার্ট-এর দায়িত্ব নেওয়ার আগে সাবেক নৌ কর্মকর্তা ব্যানন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার এবং হলিউডে প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দিকের তালিকা অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের জন্য ব্যাননের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য তাকে বাছাইয়ের কথা উঠেছিল। পরে মুখ্য কৌশলবিদ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনে পদাধিকারের চেয়েও তার গুরুত্ব অনেক বেশি।
সমালোচকরা ব্যাননকে একজন শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ও ডানপন্থি বর্ণবিদ্বেষী বলে আখ্যায়িত করেন। তার বিতর্কিত মার্কিন ডানপন্থী পত্রিকা ব্রেইটবার্ট প্রচলিত বামপন্থী আদর্শ এবং মূল রক্ষণশীল ধারাকে অস্বীকার করে উগ্র ডানপন্থী মতবাদের পক্ষে মতাদর্শ সরবরাহ করে। ব্যানন ব্রাইটবার্ট নিউজ নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়ার সময় ব্রাইটবার্টকে ডানপন্থীদের হাফিংটন পোস্ট বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত নভেম্বরে নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় ভূমিকা রেখেছে স্টিভ ব্যানন-এর ওয়েবসাইট ব্রেইটবার্ট।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল-এনএসসি) থেকে প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যাননকে অপসারণ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমসাময়িক সময়ে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে নতুন করে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া ম্যাকমাস্টারের কথা। তার জন্যই ব্যাননকে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সরে যেতে হয় ব্যাননকে। এবার তিনি মুখ্য কৌশল প্রণেতার দায়িত্ব হারিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে পুরোপুরি আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের শিকার হলেন। অপসারিত হওয়ার পর তিনি ফিরে গেছেন ব্রেইটবার্টে।
/এফইউ/বিএ/