ম্যার্কেলের জয়, কেমন হবে নতুন সরকার

 জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিগত ৭০ বছরে এটি তার দলের জন্য সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। ১৯৪৯ সালের পর ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেট (সিডিইউ) ও ক্রিস্টিয়ান স্যোশাল ইউনিয়নের (সিএসইউ) এতটা খারাপ ফল আসেনি। এদিকে সংসদে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে তাদের প্রবেশে জটিলতা দেখা দিয়েছে জোট গঠন ও সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে।

merkel-on-track-for-fourth-term-after-german-election-exit-poll-2017-9ম্যার্কেল নিজেও এমনটা আশা করেননি। জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ম্যার্কেল বলেছেন, তিনি আরও ভালো ফলাফল আশা করেছিলেন। তিনি বলেন, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) এর সমর্থকদের উদ্বেগ ও মতামতের কথা শুনবেন তিনি। শরণার্থী সংকটের মূল খুঁজে বের করতে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তার সরকার। কারণ এটাই এএফডির সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিলো।

চ্যান্সেলর বলেন, আমরা বলতে চাই আমাদের উপর এখন দায়িত্ব আরও বেশি। এবং নিবিড়ভাবে আমরা সেই দায়িত্ব পালন করে যাবো।
কেমন হবে জোট?
মার্টিন শুলজ এর নেতৃত্বে সোশ্যাল ডেমোক্রেটরাও এবার আশানুরুপ ফলাফল আনতে পারেনি। তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ফলাফল ছিলো এবারের নির্বাচনে। শুলজ জানিয়েছেন, এই ফলাফলে ম্যার্কেলের জোটের শেষ দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, জার্মানিতে আজকের দিনটি সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের জন্য খুবই কঠিন ও তিক্ততার। আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি।’
এসপিডির এই সরে আসার কারণে ম্যার্কেলের সরকার গঠনের সামনে খুবই কম পথ খোলা আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাভাবিকভাবেই নতুন জোট করতে অনেক সময় লেগে যাবে। ১৯৫০ সালের পর প্রথমবারের মতো জার্মানির সংসদে ৬টি দলের অংশগ্রহণ থাকবে।
তবে জোট গঠনে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ‘জ্যামাইকা’ জোটের। জোটের এমন নামকরণের কারণ হলো তাদের পতাকাটি জ্যামাইকা দেশের পতাকার মতো। এখানে সিডিইউ ও সিএসইউ এর কালো রং, হলুদ রং, বিজনেস ফেন্ডলি ডেমোক্রেটদের (বিডিএফ) রং ও গ্রিন পার্টির সবুজ রং হয়েছে। বিডিএফ চারবছর পরে সংসদে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম জেডিএফ জানিয়েছে, জোটের বিষয়টি সহজ হবে না। গ্রিন পার্টি ২০টি কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু এফডিপি তাতে রাজি নয়। কিন্তু জোট গঠনের জন্য তাদের একত্রিত হওয়া ছাড়া সুযোগ নেই।
তবে সবগুলো দলই এএফডির সঙ্গে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর আগেও দলটি শরণার্থী নিয়ে ম্যার্কেলের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। তাদের নীতির বড় অংশজুড়েই রয়েছে শরণার্থী বিরোধী মনোভাব, বিশেষ করে ইসলাম বিরোধী। তাদের দাবি, ইসলাম জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জষ্যপূর্ণ নয়।
তাদের অনেক নেতার বক্তব্যও বারবার এমন মনোভাব উঠে এসেছে। এএফডির প্রভাবশালী নেতা ফ্রক পেত্রি বলেছেন, ‘জার্মানির রাজনীতিতে যেন ভূমিকম্প হয়েছে। মতামত জরিপের চেয়েও ভালো করেছে এএফডি।’
আরেক নেতা বেত্রিক্স ভ্যান স্টর্চ বলেন, এই ফলাফল জার্মানির রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে। তার দাবি, এই জয়ে জনগণ ‘কথা বলার’ সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিবাসন নিয়ে কথা বলবো, ইসলাম নিয়ে কথা বলবো। আমাদের মিত্রদের নিয়ে কথা বলবো।’
শরণার্থীদের নিয়ে আরও কঠোর নিয়ম করার আহ্বান জানিয়েছে এএফডি। তাদের দাবি, এই শরণার্থীদের জন্য দেশের নিরাপত্তা ব্যহত হচ্ছে।

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্যে ম্যার্কেলের জয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ম্যার্কেল এখন ইইউ এর প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করবেন। জার্মানির গণতন্ত্র ইউরোপের ভবিষ্যৎ ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
জার্মানরাও উগ্রপন্থার দিকে এগোচ্ছে না। ম্যার্কেলের বিজয় সেটারই আভাস দেয়। জার্মানির উদারপন্থী গণতন্ত্র ইউরোপের জন্যই দরকার। ফ্রান্সে লে পেনের পরাজয়ের পর জার্মানির এমন ফলাফল সবাইকে আশাবাদী করছে যে ইউরোপে ঐক্য ফিরে আসবে। এখন প্রতিবন্ধকতা দূর করার পথ খুঁজতে হবে ম্যার্কেলকেই।
তবে এএফডির উত্থানে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে পারেন ম্যার্কেল। তবে এখনও খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না তাকে। জয় তিনিই পেয়েছেন, তবে হয়তো একটু দুর্বলভাবে।