মুগাবের পদত্যাগে জিম্বাবুয়ের রাজপথে উল্লাস

মুগাবের পদত্যাগের খবরে রাজপথে উল্লাসজিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে রবার্ট মুগাবের পদত্যাগের ঘোষণার পর দেশটির রাজপথে নেমে এসেছে উচ্ছ্বসিত জনতা। জাতীয় পতাকা নিয়ে, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, সেনাবাহিনীকে অভিবাদন জানিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন হাজারো মানুষ। রাজধানী হারারের পথে পথে এমন উচ্ছ্বসিত জনতার ঢেউ। মুগাবে জামানার অবসান ঘটনানোর জন্য সেনাবাহিনীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন তারা।

মুগাবের পদত্যাগ উদযাপনে রাজপথে জড়ো হওয়া এই ব্যক্তিরা মনে করেন, জিম্বাবুয়েতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। তাদের প্রত্যাশা দুর্নীতি ও একনায়কতন্ত্রমুক্ত একটি সরকার ব্যবস্থা; যে সরকার জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগী হবে।

এর আগে জিম্বাবুয়ের স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডা’কে লেখা এক চিঠিতে পদত্যাগের কথা জানান রবার্ট মুগাবে।

চিঠিতে মুগাবে লিখেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং নির্বিঘ্নে ক্ষমতার হস্তান্তরের সুযোগ করে দিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে আসে যখন পার্লামেন্টে এমপিরা তাকে অভিশংসনের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তবে মুগাবের পদত্যাগের খবর আসার পর সে প্রক্রিয়া থেমে যায়। দেশটির এমপিরা তার পদত্যাগের খবর উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন।

৩৭ বছর ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মুগাবে যেন হয়ে উঠেছিল জিম্বাবুয়ের প্রতিশব্দ। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এই নেতা। সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়ে মানুষের কাছে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই মনে করছে, তিনি জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি আর বলপূর্বক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন ব্যাপক আকারে ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে তখনই তাকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী। তাদের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় সাধারণ মানুষ।

২০০০ সাল থেকে জিম্বাবুয়েতে সরকারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলে কঠোর হাতে তা দমনের পথ বেছে নেন মুগাবে। এমন মন্তব্যও করেছেন যে, একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া কেউ তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। সমালোচকরা বলছেন, মুগাবে যেন নিজেকে আফ্রিকা মহাদেশের একজন একনায়কের প্রতিমূর্তিতে পরিণত করেছেন। তিনি এমন একজন একনায়ক; যিনি নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে পুরো একটি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দিনশেষে তারও বিদায় ধ্বনি বেজে উঠেছে। যেই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ভর করে ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন; শেষ পর্যন্ত তারাই তাকে সরিয়ে দিয়েছে।