কিউবায় আবিষ্কৃত ক্যানসারের টিকায় অভাবনীয় সাফল্যের সম্ভাবনা

ক্যানসার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনেছেন কিউবার একদল চিকিৎসাবিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ডব্লিউমেড খবর দিয়েছে, ক্যানসার প্রতিরোধে কিউবান বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত সেই টিকা মানবদেহে প্রয়োগ করে ভালো রকমের সাফল্য পাওয়া গেছে। গবেষক ছাড়াও চিকিৎসকরা আশাবাদী ক্যানসারের অগ্রসর স্তরে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আবিষ্কারক দলের বিজ্ঞানীরা অবশ্য তাদের উদ্ভাবনকে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ভেতরকার এক চলমান পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন। তাই বড় ধরনের অগ্রগতির কথা বললেও চূড়ান্ত কোনও সাফল্য দাবি করেননি তারা।
noname

এখন পর্যন্ত এই ক্যানসারের চিকিৎসা বলতে সাধারণত অত্যন্ত কষ্টকর কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন পদ্ধতির মতো কয়েকটি পদ্ধতি চালু রয়েছে। এ থেকে মুক্তি দিতে একটি মিরাকল টিকা নিয়ে কাজ করছেন এ বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত চার হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যক্সিরা নামের এই টিকা ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশই ক্ষেত্রেই এতে সাফল্য এসেছে। শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, বহু চিকিৎসকও এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে আক্রান্তদের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন। পরে দেখা গেছে, ওই রোগীদের শরীর থেকে আর ক্যানসারের কোষ পাওয়া যায়নি। ক্যানসারের টিকা মানেই অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল হবে; এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যেই মিলবে এই টিকা।

হাভানার’ সেন্টার ফর মলিকুলার ইমিউনোলজি’র একদল গবেষক ওই টিকার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। গবেষণা দলের প্রধান অ্যানা মারিয়া হের্নান্দেজ। কয়েক বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তিনি তাদের আবিষ্কৃত টিকাকে চূড়ান্ত সাফল্য বলতে চাননি। বলেছেন, ‘বিজ্ঞানীদের কাজ আসলে একটি অসমাপ্ত গল্পের মতো। এখানে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরও নতুন নতুন প্রশ্ন সামনে আসবে। ফলে সেগুলো নিয়েও আপনাকে আবারও অনুসন্ধান চালাতে হবে। এটি একটি নিরন্তর অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।’

গবেষকদের দাবি, ক্যানসারের অগ্রসর স্তরে এই টিকা দারুণভাবে কাজ করবে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই ভ্যাকসিনে নেই। এর প্রভাবে ব্রেস্ট, ইউটেরাস ও প্রস্টেট ক্যানসারের মতো রোগ দ্রুত সেরে উঠবে। আর এই তিনটি ক্যানসারের প্রকোপই সবচেয়ে বেশি।

অ্যানা মারিয়া জানান, এই টিকা রোগীদের আয়ু বাড়াচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এটা তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল এনে দিতে সক্ষম হচ্ছে না। অনেক রোগীদের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এটা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হয়নি।

মানবদেহে অ্যান্টিবডিটাই ক্যান্সার কোষে পরিণত হয় এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই এড়িয়ে যান, আবার বেশিরভাগই ধরা পড়ে একদম শেষের দিকে গিয়ে। এতদিন এর চিকিৎসায় মোটা দাগে থেরাপির ওপর ভরসা করা হলেও এখন নতুন এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে দ্রুত সেরে উঠছেন রোগীরা। বসনিয়া, প্যারাগুয়ে, কলোম্বিয়া ও পেরুতে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে। আর এটি যেহেতু কিউবা থেকে আবিষ্কার হয়েছে, তাই দেশটির বাসিন্দাদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিনটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গবেষণা দলের প্রধান অ্যানা মারিয়া হের্নান্দেজ বলেন, তার গবেষণা টিমের এ কাজ নিয়ে তিনি গর্বিত। মারিয়া বলেন, দিন শেষে আসলে আপনি মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রার মানকে আরও প্রসারিত করছেন। আপনি তাদের একটি ভালো ও দীর্ঘ জীবন উপহার দিচ্ছেন। সূত্র: ডব্লিউমেড।