শিগগিরই নাফটা চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেবেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই নাফটা চুক্তি (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট)  থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেবেন বলে আশঙ্কা করছে কানাডা। ত্রিদেশীয় নাফটা চুক্তিতে সংস্কার আনার প্রশ্নে আদৌ আলোচনা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে দেশটি। আরেক সদস্য দেশ মেক্সিকোও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। কানাডা ও মেক্সিকোর সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি জানিয়েছে।

নাফটার সদস্য দেশগুলোর পতাকা
নির্বাচনি প্রচারণাকালে ট্রাম্প নাফটার নিন্দা জানিয়েছিলেন। সেসময় অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে নাফটা চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও সহায়ক করতে পুনরায় আলোচনা শুরু করবেন। নাফটায় বড় ধরনের সংস্কার না আনলে এবং মার্কিন স্বার্থ সংরক্ষিত না হলে চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ারও হুমকি দিয়ে আসছেন তিনি। নাফটার সংস্কার প্রশ্নে মন্ট্রিলে আগামী ২৩-২৮ জানুয়ারি ষষ্ঠবারের মতো বৈঠক করতে যাচ্ছেন তিন দেশের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকের দিনক্ষণ এগিয়ে এলেও সংস্কার প্রশ্নে তাদের মতভেদগুলো দূর হয়নি। আর তাই, ট্রাম্প নাফটা থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কানাডার এক সরকারি সূত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘এই ব্যাপারে সরকার দিন দিন আরও বেশি নিশ্চিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেবেন।’

হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্টতা থাকা এক মার্কিন সূত্র একই ধরনের আভাস দিয়েছেন। তিনি জানান, তিন দেশের আলোচনায় খুব একটা অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প নাফটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ভাবছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি বের হতে চাই’।

হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘নাফটা নিয়ে প্রেসিডেন্টের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

মেক্সিকোর নাফটা আলোচনার ব্যাপারে জানাশোনা রয়েছে এমন এক সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানান, ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে তাদেরও আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে আসছি যে এই ধরনের সম্ভাবনা আছে।’

কানাডীয় সূত্র বলছে, ট্রাম্প যদি নাফটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন তবে কানাডা আলোচনার টেবিলেই থাকবে। নিম্ন পর্যায়ে এই আলোচনা হবে। অবশ্য মেক্সিকো আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ট্রাম্প যদি চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষনা দেন তবে তারাও চুক্তি থেকে সরে আসবে। কানাডার কর্মকর্তারা আরও বলছেন, ট্রাম্প যদি নাফটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন তবে তারা ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জন্য আলোচনায় বসতে পারেন।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, নাফটার মতো চুক্তির ক্ষেত্রে সব অংশীদার রাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের বিষয়ে অবগত করার মাধ্যমে যেকোনও স্বাক্ষরকৃত রাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। চূড়ান্তরূপে চুক্তি প্রত্যাহারের আগে নতুন করে আলোচনার জন্য আরও ছয় মাস সময় প্রদান করা হয়। তবে রয়টার্স বলছে ছয় মাসের নোটিশ দিলেও ট্রাম্প যে নাফটা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে পারবেনই তা নিশ্চিত নয়। চুক্তি থেকে সরে আসার নোটিশটি কংগ্রেসের অনুমোদন পেতে হবে। আর কংগ্রেসে এই নিয়ে ট্রাম্পকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছে রয়টার্স।

এর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোকে ঠেকাতে নাফটা চুক্তি সংস্কারে তাড়াহুড়ো করছেন ট্রাম্প। মেক্সিকোতে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে লোপেজের অবস্থানের কারণেই চুক্তিটি এই সরকারের আমলেই সেরে নিতে চাইছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। মেক্সিকোর আগামী নির্বাচনে লেফটিস্ট ন্যাশনাল রিজেনারেশন মুভমেন্ট (মোরেনা) –র প্রার্থী আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর এগিয়ে থাকাকেই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাম ঘরানার এই জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক আমলো নামে পরিচিত। তিনি মার্কিন আধিপত্য এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী। মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতজানু বলে আমলো মনে করেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন। এর আগে তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। গত বছরের জুনে আন্তঃআমেরিকান কমিশনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন আমলো। অভিবাসীদের প্রতি ট্রাম্পের নীতি ও সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের ঘোষণার প্রেক্ষিতে আমলো এই অভিযোগ দায়ের করেন।