ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ, সরকার গঠনে অচলাবস্থা তৈরির আভাস

অভিবাসন ইস্যু ও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে উত্তাপপূর্ণ প্রচার-প্রচারণার পর এলো ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে স্থানীয় সময় রবিবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে ভোট দিচ্ছেন দেশটির জনগণ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচারণার দুই সপ্তাহ আগে থেকে মতামত জরিপ পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়ায় কে বা কারা জয়ী হতে যাচ্ছেন সেই সম্পর্কে আভাস দেওয়াটা জটিল হয়ে পড়েছে। পূর্ববর্তী জরিপ অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির জোট এগিয়ে থাকলেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে। আর একক দল হিসেবে এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী অতিবামপন্থী ফাইভ স্টার মুভমেন্ট বা এমফাইভএস এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে৷ সব মিলে কে বিজয়ী হতে যাচ্ছে, কারা আদতে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা
বিবিসি জানায়, রবিবার সকাল সাতটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আর তা রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে। সোমবার (৫ মার্চ) সকাল নাগাদ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে অভিবাসী ও অর্থনীতির ইস্যু। ২০১৩ সাল থেকে অবৈধ পথে পাড়ি দিয়ে ৬ লাখ অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছেছে। অনেক ইতালীয় নাগরিকের কাছে বিষয়টি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। আর রাজনীতিবিদরাও সেই ইস্যুটিকে নির্বাচনি প্রচারণায় কাজে লাগাতে চেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির মধ্য ডানপন্থী দল ফোরজা ইটালিয়া আরও দুইটি দলের সঙ্গে জোট গড়েছে। ডানপন্থীদের এবারের প্রচারণার মূল বিষয় ছিল, ৬ লাখ ‘অনিয়মিত' অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো৷ অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থিতিকে ‘সামাজিক টাইম বোমা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বেরলুসকোনি। এছাড়া কর কমানোর বিষয়েও প্রচারণা চালিয়েছে তারা। প্রচারণা চলাকালে উগ্র ডানপন্থী সমর্থকদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হতেও দেখা গেছে।

কর জালিয়াতির অভিযোগ থাকার কারণে আগামী বছর পর্যন্ত সরকারি দফতরের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না ৮১ বছর বের্লুসকোনি। তবে চারবারের এই প্রধানমন্ত্রী দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও তাজানিকে সমর্থন দিয়েছেন। ইতালির নতুন ইলেক্টোরাল আইনে এটিই প্রথম নির্বাচন। এই আইনে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ সমর্থন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার কোনও দলের সঙ্গে জোট গঠন করেনি। একক দল হিসেবে ফাইভ স্টার এগিয়ে থাকলেও জোট গঠন না করলে তাদেরও সরকার গঠন করার সম্ভাবনা কম। মধ্যম-ডানপন্থি জোটকে নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এ জোটও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে আভাস রয়েছে। তাই তাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোট গড়তে হবে। কিন্তু সব দলের নেতাই এরইমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। সেদিক থেকে রবিবারের নির্বাচনে যদি কোনও দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত না করতে পারে তবে সরকার গঠন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আগামী ২৩ মার্চ নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন না বসা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সেরজিও মাটারেলা আনুষ্ঠানিকভাবে জোট সংক্রান্ত কোনও আলোচনা শুরু করতে পারবেন না। আর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্বগ্রহণের আগে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই আস্থা ভোটে জয় পেতে হবে।

উল্লেখ্য, ইতালির অর্থনীতি আবারও বিস্তৃত হতে শুরু করলেও ১০ বছর ধরে দেশটি বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে রয়েছে। এর অর্থনৈতিক সাফল্য এখনও সংকট পূর্ববর্তী অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। ২০১৬ সালে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে ছিল। আর একইসময়ে বেকারত্বের হার ছিল ১১ শতাংশ।