এক বছরে সাইপ্রাসের ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটির আড়াই লাখেরও বেশি গায়কপাখি মানুষের খাদ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। সাইপ্রাসে রান্না করা পাখির মাংস একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। ৪০ বছর ধরে সাইপ্রাসে পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই অপরাধকর্মে জড়িত। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব বার্ড-এর (আরএসপিবি) পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট ২০১৭ সালে ২ লাখ ৬০ হাজার পাখি শিকারের খবর দেওয়ার পাশাপাশি তার আগের বছরের চিত্রও হাজির করেছে। ২০১৬ সালে শিকার করা পাখির সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিবিড় তৎপরতায় শিকারের ব্যাপকতা ৭০ শতাংশ নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদেরকে উদ্ধৃত করে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করার জন্য ব্ল্যাক ক্যাপস ও রবিনসের মতো পাখি ধরা হয়ে থাকে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে এসব পাখি ধরে কালো বাজারের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টগুলোতে বিক্রি করে থাকে। তবে আরএসপিবি’র তদন্ত ও স্থানীয় পুলিশের নিবিড় নজরদারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় পাখি শিকার কমানো সম্ভব হয়েছে। পাখি শিকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে গোপন ক্যামেরা মোতায়েনসহ আদালতে কঠোর শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। টহল বাড়ানো ও অধিক শাস্তির কারণে শিকারীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, বাবলা গাছের জঙ্গলকে ব্যবহার করা হয় পাখি শিকারের কাজে। গাছের মধ্যে মিহি জাল বিছিয়ে ফাঁদ তৈরি করা হয়। উড়ে যাওয়ার সময় পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য জঙ্গলের মধ্যে পাখির আওয়াজ বাজানো হয়। আর তখনই ফাঁদে এসে ধরা দেয় ওই গায়ক-পাখিরা। সামরিক ঘাঁটিতে পাখি লালন করার জন্য লাগানো অস্ট্রেলিয়ান বাবলা গাছ সরিয়ে ফেলার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আরএসপিবি। তাদের মতে, গাছটি সাইপ্রাসের স্থানীয় নয়। আর পাখি শিকারের জন্য গাছগুলো ব্যবহার করা হয়।
সাইপ্রাসে পাখি ধরা অবৈধ ঘোষণা করে প্রায় ৪০ বছর আগে আইন করা হলেও তার প্রয়োগ খুব বেশি দেখা যায় না। তবে ২০১৭ সালে পরিস্থিতি বদলায়। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট আইন শৃঙ্খলা সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ১৯ জন শিকারীকে সাতটি জায়গা থেকে ধরা হয়। তাদের সবাইকে ৫ হাজার ৯শ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজনকে কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের আরও বেশি মামলা চলমান রয়েছে। আরএসপিবি’র সংরক্ষণ পরিচালক মার্টিন হারপার বলেন, আরএসপিবি ও ঘাঁটি এলাকার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজের সরাসরি ফল হিসেবে অবৈধভাবে পাখি হত্যা করার পরিমাণ কমেছে। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ ও কঠোর শাস্তি শিকারীদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে। আমাদের এখন বাকি থাকা বাবলা জঙ্গল সরানোর কাজ শেষ করা দরকার। যাতে শিকারীরা তাদের জাল আর কোথাও লুকিয়ে রাখতে না পারে। এই অভিবাসী পাখিদের সুরক্ষার জন্য এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে।
বার্ডলাইফ সাইপ্রাসের পরিচালক মার্টিন হেলিকার বলেন, বিশাল সংখ্যায় পাখি শিকার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে এখন দ্বিগুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আইন ভঙ্গকারী রেস্টুরেন্টগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই বাড়তি ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।