সুপেয় পানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুরু হচ্ছে বিশ্ব পানি সম্মেলন

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো মানুষ ও পশুপাখির জন্য খাবার পানির সরবরাহ কমে যাওয়া। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য নতুন পানি ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য তিন বছর পরপর আয়োজন করা হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ফোরাম বা বিশ্ব পানি সম্মেলন। এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানি সমৃদ্ধ দেশ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে এই পানি সম্মেলন। ১৮ মার্চ রবিবার থেকে ২৩ মার্চ শুক্রবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

Oct---Mahmud-MapBGD-MR-2006-0006429

‘পানি বন্টন’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত ‘৮ম বিশ্ব পানি সম্মেলনে’ বিশ্বের ১৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন। দেশটির রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় আয়োজিত সম্মেলনে ৩ শতাধিক মেয়রসহ অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা নিজেদের গবেষণা নিয়ে মতবিনিময় করবেন। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান রয়েছে সোমবার। সেদিন ইউনেস্কো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পানি সম্পদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আয়োজকরা বলছেন, সম্মেলনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের পটভূমিতে একটি নাটক দেখানো হবে। সেখানে জুলাই মাসের প্রথমদিকে পানি শেষ হয়ে যায়। পানি অভাবে গৃহস্থালিতে খুব অল্প সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। তবে সঠিক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। সেখানকার স্থানীয় সরকার বলছে, পানির ব্যবহার ৬০ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে পানির ওই সংকট এখন কমিয়ে আনা গেছে। বিশ্বের স্বাদু পানির বড় বড় উৎসের অনেকগুলো এখন দূষণ, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মধ্যে রয়েছে সেই বিষয়টিও মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

ব্রাজিলের জাতীয় পানি সংস্থার প্রধান নেয় মারানহাও বলেন, ‘এখন বাড়তি পানির চাহিদা, বাড়তি যানবাহন, বাড়তি শিল্প কারখানা ও বাড়তি মানুষ রয়েছে। এই বাড়তি সবকিছুর তুলনায় পানি সরবরাহ সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ খুবই অপ্রতুল।’  

Bangladesh5

সম্মেলনের আয়োজক ফোরামের পরিচালক রিকার্ডো মেদেইরোস বলেন, ‘পানির বিষয়টিতে অবশ্যই অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সব আন্দোলনকর্মীদের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও এটাকে কখনওই প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। পানি জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শুধু কথা বললেই এখন আর চলে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও পানি অনেক বেশি  গুরুত্বপূর্ণ।’

ওয়ার্ল্ড রির্সোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কলিন স্ট্রং এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘এতিহ্যগত বয়ান পরিষ্কারভাবে কাজ করছে না। কেপটাউনে এক সময় খরা হতো কিন্তু কার্যকর দুর্যোগ প্রশমন পরিকল্পনার তা মোকাবিলা করা যাচ্ছে। পানির অভাব আছে এমন কোনও শহরগুলোতে কেপটাউনের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বাদু পানির মজুদ রয়েছে ব্রাজিলে। সেখানে সুপেয় পানির প্রায় ১৮ শতাংশ রয়েছে। তারপরও দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝে মাঝে খরা দেখা যায়। এমনকি দেশটির রাজধানী ব্রাসিলিয়ায়ও গত বছরের জানুয়ারি থেকে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আর এমন সময়ই সেখানে এই বিশ্ব পানি ফোরাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

মেদেইরোস বলেন, পানি সমাজ ও দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। তাই অন্য যেকোনও কিছু নয় পানিই পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধ ঘটাতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। এই সম্মেলনে সঠিক অনুশীলন, সমাধান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করার চেষ্টা করা হবে।