বিশ্বের ১২৯টি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করা জার্মানির সংস্থা বার্টেলসম্যান স্টিফটুং বলেছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশের মান নিচে নেমে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা উপেক্ষিত। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা এমন পরিস্থিতির পেছনে থাকা কারণগুলোর একটি। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার বিচারে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে রাশিয়া। মূলত বাংলাদেশ ও রাশিয়া দুই দেশই গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে দশের ভেতর ৪.৬ পেয়েছে।
বার্টেলসম্যান স্টিফটুংয়ের ভাষ্য, বর্তমানে ৩৩০ কোটি মানুষ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অধীনে রয়েছে। আর বাকি ৪৪০ কোটি মানুষ আছে গণতন্ত্রে। গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া ১২৯টি দেশের ৫৮টিকে স্বৈরতান্ত্রিক ও ৭১টিকে গণতান্ত্রিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা দুটি ছিল যথাক্রমে ৫৫ এবং ৭৪। স্বৈরতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা কয়েকটি বাড়ার চেয়েও বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই নাগরিক অধিকার হরণ এবং আইনের শাসনকে উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ব্রাজিল, পোল্যান্ড এবং তুরস্কের মতো গণতন্ত্রের জন্য সুপরিচিত দেশগুলোও সর্বশেষ প্রকাশিত বার্টেলসম্যান স্টিফটুং ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্সে (বিটিআই) নিচের দিকে নেমে গেছে। বুরকিনা ফেসো এবং শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষেত্রে ৪, শাসন করতে পারার কার্যকর ক্ষমতা থাকার ক্ষেত্রে ৩, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ৪, নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে ৪, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ক্ষেত্রে ৩ নম্বর পেয়েছে। চূড়ান্ত হিসেবে গণতান্ত্রিক থাকা না থাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গড় নম্বর দাঁড়িয়েছে ৪.৬। বার্টেলসম্যান স্টিফটুংয়ের হিসেবে, গড়ে ৪.৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। একই গড় পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের ঠিক নিচেই আছে রাশিয়া। দেশটির অবস্থান ৮১তম।
২০১৮ সালের প্রকাশিত সূচকে বার্টেলসম্যান স্টিফটুং দেখিয়েছে গণতন্ত্রে এগিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি দেশসহ মোট ৪০ দেশের সরকার কোন না কোনভাবে আইনের শাসন ব্যহত করেছে। আর ৫০টি দেশ রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। সংস্থাটি মনে করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশগুলোর যে খারাপ ফলাফল তাদের সূচকে উঠে এসেছে তার অন্যতম কারণ উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আলোচনায় না বসা। তুরস্ক ও হাঙ্গেরির মতো দেশের নেতারা জনসমর্থন নিয়ে জিতে এলেও পরে ক্ষমতা সংহত করতে গণতন্ত্র হরণ করেছে। বার্টেলসম্যান স্টিফটুংয়ের চেয়ারম্যান ও সিইও আর্টে ডি গেস বলেছেন, ‘অনেক নেতা নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতা স্থায়ী করতে চায়। যদিও সংলাপের বদলে নিপীড়ন ব্যবহার করে শাসন করতে থালে তা শেষ পর্যন্ত কানাগলিতেই নিয়ে যায়।’
২.৬ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ সুদান, উত্তর কোরিয়া, লিবিয়া ও সৌদি আরব; ২.২ পয়েন্ট নিয়ে সুদান, ২.১ পয়েন্ট নিয়ে ইরিত্রিয়া, ১.৮ পয়েন্ট নিয়ে ইয়েমেন ও সিরিয়া এবং ১.৪ পয়েন্ট নিয়ে সোমালিয়া তালিকার একদম নিচে স্থান পেয়েছে। গণতন্ত্র চর্চার ভালো উদাহরণ হিসেবে তালিকার উপরে রয়েছে উরুগুয়ে, এস্তোনিয়া, তাইওয়ান, লিথুনিয়া ও চেক রিপাবলিক। তালিকায় ভারতের অবস্থান ২৪তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান ৯৮তম। মিয়ানমারের অবস্থান আর নিচে—১০৪তম। স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা ৫৮ টি দেশের মধ্যে ১৮টি ‘মাঝারি স্বৈরতন্ত্র’; বাকি ৪০টি চরম স্বৈরতন্ত্র।
বার্টেলসম্যান স্টিফটুং একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন, যার সদর দপ্তর জার্মানিতে অবস্থিত। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিও স্পেনের বার্সেলোনায় সংস্থাটির শাখা রয়েছে। বার্টেলসম্যান স্টিফটুং তাদের ওয়েব সাইটে জানিয়েছে, বিশ্বায়নের কারণে উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতির পাঠ তাদের আগ্রহের অন্যতম একটি বিষয়।