সদস্যপদ পেতে ইইউয়ের সহযোগিতা চান এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে তুরস্কের সামনে যে বাধাগুলো রয়েছে তা অপসারণে ব্যবস্থা নিতে তিনি ইউয়ের প্রতি আহ্বান জানাবেন। যদিও ইউ মনে করে, যেসব কারণে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের  সদস্য হতে পারছে না সেগুলোর জন্য তুরস্ক নিজেই দায়ী। একদিকে বুলগেরিয়ার সমর্থন পাওয়া ও অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার বিরোধিতার মুখে পড়া তুরস্ক সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাচ্ছে ইউয়ের কাছ থেকে। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীও দেশটি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে এরদোয়ানের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে উল্লেখ করেছে, সদস্যপদ না পাওয়ার পেছেনে নাগরিক অধিকার হরণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংস্কার পর্যন্ত বেশ কিছু কারণ রয়েছে। 

s1.reutersmedia.net

ইইউভুক্ত দেশের সরকারগুলো এরদোয়ানকে ক্রমেই একনায়কতান্ত্রিক শাসক হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। তাছাড়া সিরিয়ায় দেশটির ভূমিকা নিয়েও তুরস্কের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ওপর মেঘের ছায়া পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই ভার্নাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউ সদস্যদের সঙ্গে তুরস্কের সম্মেলন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে তুরস্কের ইচ্ছার কথা সাংবাদিকদের জানিয়ে এরদোয়ান বলেছেন, ‘ইউয়ের সদস্য হওয়া আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর একটি। আজকের সম্মেলনে আমরা আমাদের প্রত্যাশার কথা জানাব, যাতে সদস্য হওয়ার পথে যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলো অপসারণ করা হয়।’ তার ভাষ্য, এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত তুরস্ককে তাদের সদস্য করে নেওয়ার ‘প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা।’ এরদোয়ান সোমবার সাংবাদিকদের ইউয়ের সঙ্গে তুরস্কের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘২০১৬ সালে হওয়া শরণার্থী সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক সব কিছুই করেছে। কিন্তু ইউ তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা তাদের জানাব, সন্ত্রাস দমনে আমরা তাদের কাছ থেকে শর্তহীন সহযোগিতা চাই।’

তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। ইসলামি স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও তারা ভূমিকা রেখেছে। দেশটির ইরাক, সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। ইউ দেশটির সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বিনিয়োগকারী এবং বাণিজ্য সহযোগী। কিন্তু রয়টার্স লিখেছে, ইউরোপের দেশগুলোর সংগঠন এরদোয়ানকে শুধু ৩০০ কোটি ইউরো দেবে সিরিয়ার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য, তার বেশি কিছু নয়। কারণ ইউ মনে করে, সংগঠনটির সদস্যপদ পাওয়া না পাওয়ার সিদ্ধান্তটি একটি পৃথক বিবেচনার বিষয়, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সংস্কারসহ আরও অনেক প্রশ্ন। ইউয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউ আর তুরস্কের মধ্যে মতের পার্থক্য অনেক বেশি। ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে নাগরিক অধিকার হরণের ঘটনা বাড়তে থাকায় তুরস্কের ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও দূরে সরে গেছে।

তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার বিষয়ে চলা আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যর্থ ঘোষণা করা হয়নি কিন্তু তা থেমে আছে অনেকদিন ধরে। তুরস্কের প্রতিবেশী বুলগেরিয়ার ভার্নাতেই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বয়কো বোরিসভ মনে করেন, ভার্নার এই সম্মেলন আলোচনা চালিয়া যাওয়ার শেষ সুযোগগুলোর একটি। তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আপত্তি জানিয়েছে অস্ট্রিয়া। দেশটির চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কার্জ এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়া যুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে তুরস্কের ভূমিকা রাখার অভিযোগ তুলে বলেছেন, ইইউয়ের উচিত তুরস্কের নিন্দা করা।