‘ঘর সামলানো’র ইসরায়েলি পরামর্শ ‘পুরুষতান্ত্রিক ও বর্ণবাদী’

ফিলিস্তিনি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র  অ্যাভিচ্যা আদ্রেয়ি। টুইটারে করা তার  মন্তব্যকে পুরুষতান্ত্রিক ও বর্ণবাদী আখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীরা। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ

গাজায় চলমান ভূমি দিবসের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী নারীদের উদ্দেশে ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র অ্যাভিচ্যা আদ্রেয়ি টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘সত্যিকারের নারী হিসেবে কেবল তাদেরই শ্রদ্ধা করা যায়, যারা ঘর সামলান আর সন্তানদের দেখাশোনা ও যত্নআত্তি  করেন। এইসব কর্মকাণ্ডে যাদের মনোযোগের অভাব রয়েছে, তারা নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যের বাইরের। সমাজ তাদের ভালো চোখে দেখে না।’ তিনি আরও লিখেছেন,  ‘মেধাই নারীদের অস্ত্র, নারী-প্রকৃতিই তাদের শক্তি।' ফিলিস্তিনি প্রতিরোধে যুক্ত নারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেইসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিতদের মধ্যে নারীত্বের বৈশিষ্ট্য কোথায়?’

১৯৭৬ সালের ৩০শে মার্চ ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইহুদি বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকেই ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপকতা এবারের ভূমি দিবসের কর্মসূচিকে করে তুলেছে স্বতন্ত্র। ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র সম্প্রতি  এই নারীদেরকেই ঘরে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন।

সাংবাদিক খালেদ দিয়াব ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিজ রাষ্ট্রের নারীর ক্ষমতায়ন নীতির লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এসব কথা বলেছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র। অথচ আপনারা জানেন ওই সেনাবাহিনীতেই হাজার হাজার নারী চাকরি করছেন। আর সেনাবাহিনীটি এমন একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে যারা লৈঙ্গিক সমতায় বিশ্বাস করে বলে দাবি করে থাকে’। আদ্রেয়ির পোস্টকে ‘পুরুষতন্ত্র ও বর্ণবাদের একটি কুৎসিত মিশ্রণ’ বলেও মন্তব্য করেন দিয়াব। নারী বিক্ষোভকারী মুনা আবু সামে মিডলইস্ট আইকে বলেন, ‘আমি তাকে বলবো, তিনি ভুল। আমরা সঠিক অবস্থানে রয়েছি আর পুরুষরা আমাদের পেছনে রয়েছে। আর আমরা আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকারের দাবি করছি’।

তুকা আল গালবান ১৫ বছর বয়সী কিশোরী। তিনি বলেন, ‘ঘরই নারীর একমাত্র গন্তব্য নয়। পুরুষের পাশাপাশি প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়াও নারীর দায়িত্ব। নিজ ভূমির অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে সব মানুষের সমর্থন দরকার।’ অপর একজন ফিলিস্তিনি নারী লিখেছেন, ‘না, অ্যাভিচ্যা আদ্রেয়ি, বাড়ির রান্নাঘরই কেবল নারীর আশ্রয় নয়। ফিলিস্তিনি নারীরা সবসময়ই জাতিমুক্তি আর ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের অগ্রভাগে ছিল।’ 

নারীদের ঘরে ফেরার পরামর্শই আদ্রেয়ির প্রথম বিতর্কিত মন্তব্য নয়। ভূমি দিবসের আন্দোলন শুরুর আগে এক ভিডিও বার্তায় ফিলিস্তিনি নারীদের ‘গ্রেট মার্চ রিটার্ন’ এ অংশ নেওয়া উচিত নয় বলে দাবি করে সৌদি আরবের একটি ফতোয়ার কথা উল্লেখ করেন আদ্রেয়ি। ওই ভিডিও বার্তায় আদ্রেয়ি বলেন, ‘সৌদি পন্ডিত শেখ সালেহ আল ফাওজান এ ধরনের বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কারণ মুসলিম নৈতিকতার সঙ্গে এমন আচরণ মানায় না। এটা কাফেরের বৈশিষ্ট্য এবং নৈরাজ্য ও গোলযোগের মনোভাব ইসলাম সহ্য করে না’। আদ্রেয়ি আরও বলেন, ‘শেখ ইবন উথায়মিন বলেছেন যে, অবস্থান ধর্মঘট ও সহিংস বিক্ষোভ শয়তানের কাজ কারণ এসব বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত করে’।

চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০ এপ্রিলের বিক্ষোভ মিছিলটি ‘উইম্যানস মার্চ অব গাজা’ আখ্যা পেয়েছে। আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, ৩০ মার্চ শুরু হওয়া ভূমি দিবসের কর্মসূচি গ্রেট রিটার্ন মার্চ শুরু হওয়ার দিন থেকে ২০ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর স্নাইপারে ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৬০০জন। নিহতদের মধ্যে শিশু থাকলেও কোনও নারী নেই। আহত নারীর সংখ্যা ১৬০।