শূকরের মস্তিষ্ক পরীক্ষায় সাফল্য, কৃত্রিম পথে মানুষের আয়ু বৃদ্ধির ইশারা

মস্তিষ্ক ছাড়া ৩৬ ঘণ্টা পার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে একটি শূকর। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভিভাবনীয় সাফল্যের ইশারা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দেহবিচ্ছিন্ন শূকরের মস্তিষ্ক গবেষণাগারে পরীক্ষার পর তা আবার ওই শূকরের দেহে প্রতিস্থাপন করে সফলতা পাওয়া গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কাজে লাগানো গেলে এই প্রক্রিয়ায় স্নায়ুরোগ মোকাবেলা সহজ হবে। তবে এখান থেকে মানুষ নিজেদের আয়ু বাড়ানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
noname

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে,  শূকরটির মস্তিষ্ক তার শরীর থেকে আলাদা করে বাইরে নিয়ে এসে পরীক্ষাগারে গবেষণা চালানো হয়। সে সময় তার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন চালু রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়, পাম্প, হিটার এবং কৃত্রিম রক্তের। যার মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যান বিজ্ঞানীরা। ৩৬ ঘণ্টা পর সেই মস্তিষ্ক পুনঃস্থাপন করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুনঃস্থাপিত মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন চালু করতে সমর্থ হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর বেঁচে ওঠা শূকরটি আবার ক্রমে স্বাভাবিক জীবন শুরু করে। বিস্ময়কর এই ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার গবেষক দলের নেতা অধ্যাপক নেনাদ সেস্টান জানিয়েছেন, তারা অন্তত ১০০টি শূকরের ওপর পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা চালিয়ে এই সফলতা পেয়েছেন।

গবেষণার এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করেন, যে পাম্প, হিটার এবং কৃত্রিম রক্তের একটি প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে পারলে মস্তিষ্ক শরীরের বাইরে আনার পরেও তার কোষে রক্ত সঞ্চালন করা সম্ভব। এরপর রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া কার্যকর রেখে ঐ শূকরটির মস্তিষ্ক শরীরে বাইরে নিয়ে আসা হয়। গবেষকেরা বলছেন, এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে মানুষের পুরো মস্তিষ্ক শরীরে বাইরে এনে পরীক্ষা করার একটি উপায় খুঁজে বের করা।

অধ্যাপক সেস্টান বলছেন, এই প্রক্রিয়া যদি মানুষের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তাহলে সেটি অনেক স্নায়বিক ব্যাধির নিরাময় পদ্ধতি আবিষ্কারে সাহায্য করবে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ঐ সময়ে যদি মানুষের জ্ঞান তাহলে তার সুরক্ষার জন্য কি ব্যবস্থা করা হবে? অথবা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ যদি তার আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে নিতে চায় সেটি বৈধ হবে কিনা? অর্থাৎ ল্যাবে যদি মানুষের মস্তিষ্কের কৃত্রিম কোষ তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে মৃত্যুর পরেও হয়ত তার মস্তিষ্কের কার্যকরিতা শেষ হবে না। কিন্তু যেহেতু পৃথিবী এখনি অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত, নতুন ব্যবস্থায় সেটি আরো জটিলতা তৈরি করবে বলেই অনুমান বিজ্ঞানীদের।