‘আফ্রিকার খাদ্য সংকটকে ইউরোপে জঙ্গি ঢোকানোর কৌশল বানিয়েছে আইএস’

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান ডেভিড বেসিল আশঙ্কা করছেন, আফ্রিকার খাদ্য সংকটকে ব্যবহার করে অবাধে ইউরোপে জঙ্গি পাঠানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট)। তার দাবি, প্রচেষ্টা সফল করতে আইএস সংকট কবলিত এলাকার ক্ষুধার্তদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা নিয়েছে। ডেভিড বেসিল মনে করছেন, এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আফ্রিকা থেকে ইউরোপগামী অভিবাসীদের স্রোত ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে আইএস, যেন সেই স্রোতের মধ্যদিয়ে জঙ্গিদের ইউরোপে পাঠানো যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকটজনক আখ্যা দিয়েছেন দক্ষিণ ক্যারোলাইনার সাবেক এই রিপাবলিকান গভর্নর।
প্রতীকী ছবি

বেসলি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পের সুপারিশে তিনি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তিনি জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস ও ক্যাপিটোল হিল উভয়ই সংস্থাটির তহবিল জোগানে এগিয়ে এসেছে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩০০ কোটি ডলার পাওয়ার প্রত্যাশা করছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম। ২০১৬ সালে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৯০ কোটি ডলার। সম্প্রতি দুই দিনব্যাপী আয়োজিত সিরিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলসে যান বেসলি। সে সময় প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বেসলি।

গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,  সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেটের বিতাড়িত জঙ্গিরা আফ্রিকার স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে এলাকাটির খাদ্য সংকটকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। বেসলির দাবি,  ‘একদিকে তারা সংকট কবলিত এলাকার ক্ষুধার্ত মানুষদের  নিজেদের দলে ভিড়াতে চেষ্টা করছে,  অন্যদিকে তারা খাদ্য সংকট তীব্রতর করে তোলারও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য পরিস্থিতি এমন করে তোলা, যাতে ওখানকার অধিবাসীদের একটি বড় অংশ শরণার্থী হতে বাধ্য হয়। আর স্বাভাবিকভাবেই শরণার্থী হয়ে অধিবাসীরা ইউরোপের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে, তাদের সঙ্গে মিশে ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ পাবে আইএস জঙ্গিরা।’ ইউরোপকে সাহেল অঞ্চলে আইএসের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসলি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি এটি। পার্থক্য শুধু এখানেই, আবার অনেক বেশি আইএস সদস্য অভিবাসীদের দলের মধ্যে মিশে যাবে। আমরা যা বুঝতে পারছি তা হলো, আইএস বোকো হারাম ও আল কায়েদার মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে এলাকা ও রসদ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তারা যৌথভাবে পরিকল্পনা করেছে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার, যাতে শরণার্থীদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।’ বেসলির দাবি, ‘ তারা খাদ্য সংকটকে ব্যবহার করে আরও বেশি অভিবাসীকে ইউরোপের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। যাতে ওই শরণার্থীদের সঙ্গে মিশে তারা ইউরোপে যেতে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে পারে।’ ইউরোপিয়ানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অস্থিতিশীলতা এবং সংঘাতের কারণে সিরিয়ার প্রায় ২ কোটি মানুষের অভিবাসিত হওয়ার বিষয়টিকে যদি তারা সমস্যাজনক মনে করেন, তাহলে তাদের জন্য সামনে আরও বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে। সাহেল অঞ্চলের ৫০ কোটি মানুষ যখন আরও অস্থিতিশীলতার শিকার হবে তখন ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারবে কেন তাদের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’

গার্ডিয়ান লিখেছে, চার বছর ধরে চলা সামরিক অভিযানে আইএসের তথাকথিত খিলাফতের বেশিরভাগটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। খুব সামান্য একটি অংশ এখনও ইরাকে টিকে আছে। সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরিয়ার পূর্বে অন্তত ২ হাজার ২০০ জন আইএস জঙ্গি এখনও ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে।