আন্তর্জাতিক আদালত আফ্রিকার প্রতি বিরূপ: রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বিশ্বের অন্য অংশের চেয়ে আফ্রিকা মহাদেশের প্রতি বেশি বিরূপ উল্লেখ করে আবারও ক্ষোভ জানিয়েছেন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে। শনিবার (২৮ এপ্রিল) ব্রিটিশ-সুদানিজ টেলিকম ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকার সমালোচনা করেন তিনি। কাগামে বলেন, ‘গোটা বিশ্বের সমস্যা মোকাবিলার কথা থাকলেও আইসিসি কেবল আফ্রিকার মানুষের বিচার করেই ক্ষান্ত হয়।’  

রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামে
২০০২ সালে ১২৪ জন সদস্য দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গঠিত হয়। এই আদালতে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মত অভিযোগের বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আফ্রিকার প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রদর্শনের অভিযোগ উঠে আসছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ারও অভিযোগ জানিয়ে আসছে আফ্রিকান দেশগুলো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ হেগভিত্তিক এ আদালত থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে কিংবা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত আইসিসির অনুসন্ধানকৃত ১০টি ঘটনার মধ্যে একটি বাদে সবগুলোই আফ্রিকার।

রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে শনিবার মো. ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল  কাগামে। বৈঠকে আফ্রিকান দেশ রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ আছে যাদেরকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। আফ্রিকান দেশগুলোর কয়েকজন নেতার বিচার করছে আইসিসি। যে কারণে (তাদের অপরাধ) তাদের বিচার করা হচ্ছে সেগুলো তারা অন্য দেশের কারও সঙ্গে মিলিত হয়েই করেছেন। কিন্তু তাদের (অন্য দেশের অপরাধীদের) বিচার আইসিসি করছে না।’

আন্তর্জাতিক আদালতের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কাগামে আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই, আমি বলব জালিয়াতির ওপর ভিত্তি করেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেভাবেই এর ব্যবহার হচ্ছে। আমি লোকজনকে বলেছিলাম যে এ আদালত শুধু আফ্রিকানদের বিচার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিশ্বের সবার বিচার করার জন্য নয়। এবং আমি মনে করি না যে আমি ভুল প্রমাণিত হব।’   

রুয়ান্ডা রোম স্ট্যাচুর সমর্থক দেশ নয় এবং প্রেসিডেন্ট কাগামেও দীর্ঘদিন ধরেই আইসিসির সমালোচনা করে আসছেন। ২০০৮ সালে আইসিসিকে ‘প্রতারণাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

আল জাজিরা জানায়, কেউ কেউ মনে করছেন প্রতিবেশী দেশ ডি আর কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত সামরিক কমান্ডারদের সুরক্ষা দিতে এমন অবস্থান নিয়েছেন কাগামে। তবে রুয়ান্ডার রাজনৈতিক বিশ্লেষক লোনজেন রুজিরা তা মনে করছেন না। তার দাবি, আইসিসির ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’র কারণে আদালতটির এমন সমালোচনা করেছেন কাগামে। তিনি বলেন, ‘আইসিসি আফ্রিকাকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। কাগামে বিশ্বাস করেন, ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি থাকা উচিত। কিন্তু আইসিসিতে তার উপস্থিতি নেই।’