উত্তর কোরিয়া সফরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করার মধ্যেই বুধবার দেশটি সফরে গেলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। আগামী জুনের গোড়ার দিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সম্ভাব্য উত্তর কোরিয়ার সফরের আগে এ সফরে তাই গুরুত্ববহ মনে করা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ওয়াং ইদক্ষিণ কোরীয় সংবাদমাধ্যম ইয়োনহ্যাপ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই দিনের এ সফরে আন্তঃকোরিয়া সম্মেলন ও শি জিনপিং-এর সম্ভাব্য সফরের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।

চীন উত্তর কোরিয়ার একমাত্র অর্থনৈতিক মিত্র হলেও অনেক বছর উচ্চ পর্যায়ের কোনও চীনা কর্মকর্তা পিয়ংইয়ং যাননি। গত মার্চে কিম আচমকা চীন সফর করেছিলেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার নেতা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর এটিই ছিল উনের প্রথম আন্তর্জাতিক সফর।

এদিকে শুক্রবার পানমুনজমে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক সমঝোতা অনুযায়ী দুই দেশের সীমান্ত থেকে মাইক খুলে নেওয়া হচ্ছে। ওই মাইকগুলো ব্যবহার করে তারা এত বছর একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাত। ছোট হলেও, সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এটাই প্রথম কোনও বাস্তব পদক্ষেপ।

মঙ্গলবার বিকালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম তাদের লাগানো মাইকগুলো খুলে নেওয়া শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়া সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, উত্তর কোরিয়াও তাদের লাগানো মাইক খুলে ফেলছে। এতগুলো বছর ধরে দুই কোরিয়া ওই মাইকগুলো ব্যবহার করে একে অপরের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালাত। বিরল কিছু বিরতি ছাড়া তারা একে অপরের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রচারণা চালাত।

দক্ষিণ কোরিয়া সংবাদ, কোরিয়ান পপ সঙ্গীত  এবং উত্তর কোরিয়া সরকারের সমালোচনা প্রচার করে যেত উত্তরে মুখ করা মাইকগুলোতে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া তাদের মাইকে উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রশংসা ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সমালোচনা প্রচার করত। সমঝোতার প্রতি নিষ্ঠার প্রমাণ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া সম্মেলনের আগে মাইকে চালানো প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। পরে উত্তর কোরিয়াও দক্ষিণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে।

এর আগে গত শুক্রবার দুই কোরিয়ার নেতারা কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত করা ও সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একমত হয়েছেন। তাদের স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বর্জনের পাশাপাশি অন্যান্য অস্ত্রের মজুদও সীমিত করবেন। দুই দেশের ভাষ্য, ‘সামরিক উত্তেজনা কমে আসলে এবং দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তি পেলে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া ধাপে ধাপে তাদের মজুদ অস্ত্রের পরিমাণ কমিয়ে আনবে।’ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও আদান-প্রদানের সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা। কোরিয়া বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে যেসব কোরীয় পরিবার বিচ্ছিন হয়ে গিয়েছিল, তাদের আবার মিলিত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।