ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট ইস্যুতে গণভোটের পর থেকে দেশটিতে বর্ণবাদ আরও বেড়েছে। ওই ভোটাভুটির পর ক্রমবর্ধমান জাতিগত বৈষম্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমনটাই মনে করেন জাতিসংঘের বর্ণবাদ বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক তেন্দায়ি আচিউম।
তিনি বলেন, গণভোটের সময় থেকে এমন প্রবণতা বেড়েছে। গণভোটের পর এটি জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের আরও অরক্ষিত করে তুলেছে।
অধ্যাপক তেন্দায়ি আচিউম বলেন, আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অনেকে শরণার্থীসহ বিদেশীদের সম্পর্কে অহেতুক ভীতির ব্যাপারটিতে জোর দিচ্ছিলেন।
এর আগে গত মার্চে যুক্তরাজ্যে বর্ণবাদ ও ইসলাম-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ মার্চ শনিবার দেশটির বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বর্ণবাদ, উগ্রপন্থা, ইসলাম-বিদ্বেষ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির নিন্দা জানান বিক্ষোভকারীরা। লন্ডন, কার্ডিফ ও গ্লাসগোর মতো শহরগুলোতে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ‘পানিশ অ্যা মুসলিম ডে’-এর মতো উগ্রবাদী তৎপরতার নিন্দা জানানো হয়। সংহতি জানানো হয় শরণার্থী ও অভিবাসীদের অধিকারের প্রতি। বিক্ষোভকারীরা ‘অভিবাসী ও শরণার্থীদের স্বাগত’, ‘বর্ণবাদী হামলা বন্ধ কর’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিলকে ‘পানিশ অ্যা মুসলিম ডে’ ঘোষণা করে বিদ্বেষপ্রসূত চিঠি ছাড়া হয়। লন্ডন, ইয়র্কশায়ার ও মিডল্যান্ড এলাকার বাসিন্দারা এ ধরনের চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। অনলাইনে একই ধরনের একটি চিঠি ছড়ানো হয়েছে এ-ফোর সাইজ কাগজের ছবিতে। ছড়িয়ে পড়া চিঠিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর মৌখিক আক্রমণ, নারীর হিজাব খুলে ফেলা, শারীরিক আঘাত, মসজিদে হামলা ও অস্ত্র হিসেবে এসিড ব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতা ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়। পয়েন্ট দিয়ে এসব কর্মকাণ্ডের পর্যায়ক্রমিক তালিকা তৈরি করে চিঠিতে বলা হয়েছে, সহিংসতায় অংশ নিলে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।
যুক্তরাজ্যের চারজন মুসলিম এমপি ওই চিঠি পেয়েছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই এমপি রুশনারা আলী এবং রুপা হক ওয়েস্টমিনস্টারে নিজেদের পার্লামেন্টারি অফিসে ওই চিঠির প্যাকেটগুলো পান। রুপা হকের একজন স্টাফ ওই চিঠির প্যাকেট খুলেছিলেন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার এক মাসের মাথায় যুক্তরাজ্যে বর্ণবাদ বৃদ্ধি নিয়ে কথা বললেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত।
ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জাতিগত বৈষম্য মোকাবিলার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের আইন ও নীতির প্রশংসা করেছেন। মিশন শেষে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি জাতিগত বৈষম্য সংক্রান্ত নিরীক্ষাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ পদক্ষেপকে তিনি জাতিগত সমতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার অসাধারণ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সাধন করেছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট যে, জাতিগত বৈষম্যের জন্য কোনও যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।