ইরানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ঠেকাতে তৎপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন

পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞায় নিজেদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষার উপায় খুঁজছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এজন্য ‘ব্লকিং স্টাটুট’ নামের একটি আইন কার্যকর করতে শুক্রবার থেকে প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর একটি কমিশন। বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন ক্লাউড জাঙ্কার বলেছেন, আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা থেকে ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোকে রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে তাদের। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন ক্লাউড জাঙ্কার
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০১৫ সালে তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ৫ দেশ ও জার্মানি। ওবামা আমলে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে ‌‘সবচেয়ে খারাপ’ চুক্তি আখ্যা দিয়ে তার থেকে এই মাসেই বের হয়ে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।  বহাল করা হয় ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। গত রবিবার (১৩ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

ওই নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের কোম্পানিগুলোকে রক্ষায় বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন ইউ নেতারা। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন ক্লাউড জাঙ্কার বলেন, ‘আমাদের এখন কাজ শুরু করা দরকার, আর সেই কারণে আমরা ১৯৯৬ সালের ‘ব্লকিং স্টাটুট’ সচল করার প্রক্রিয়া শুরু করছি। আগামীকাল (শুক্রবার) সকাল সাড়ে দশটায় (স্থানীয় সময়) আমরা তা করবো।’

১৯৯৬ সালে কিউবার ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ‘ব্লকিং স্টাটুট’ নীতি তৈরি করা হয়। এতে বলা হয় নিষেধাজ্ঞা আইনের ভিত্তিতে কোনও বিদেশি আদালতের রায় ইউ এর ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সোফিয়া থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা পল ব্রেনান জানিয়েছেন, ‘ব্লকিং স্টাটুট’ নামের এই নীতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এর কার্যকারিতা সীমিত হয়ে পড়ে।

তিনি জানান, ১৯৯৬ সালের এই নীতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কিউবার সঙ্গে ইউরোপিয়ান ব্যবসাকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হতো। তবে মার্কিন কংগ্রেস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেওয়ার মতো নতুন আইন পাশ করে এই নীতিকে অকার্যকর করে দেয়।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউরোপীয়ান সরকারগুলো ইউরোপিয়ান কমিশনের ‘ব্লকিং স্টাটুট’কে নীতি থেকেও বেশি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকে। এর কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এর নিয়মকানুনগুলো খানিকটা অস্পষ্ট আর প্রয়োগ করাও কষ্টসাধ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্কতা দিতেই এই নীতি ব্যবহৃত হয়।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে জাঙ্কার বলেছেন, ইউরোপিয়ান কমিশন ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোকে প্রথমবারের মতো ইরানে বিনিয়োগে সহায়তা দিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।