যুবরাজের ‘সংস্কার প্রচারণায় সংশয়ী’ নারীদের আটক করছে সৌদি আরব

গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন নারী অধিকার কর্মীকে আটক করেছে সৌদি আরব। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)ও গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (জিসিএইচআর) অন্তত ৭ জন নারী অধিকার কর্মীকে আটকের কথা জানিয়েছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, যুবরাজের সংস্কার প্রচারণায় সংশয়ী অধিকারকর্মীরা আটকের শিকার হচ্ছেন। এইচআরডব্লিউ ও জিসিএইচআর-এর পৃথক দুই বিবৃতির বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা অধিকারকর্মীদের আটকের খবর দিয়েছে।এই বছরের জুনে উঠে যাচ্ছে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা
শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে গত ১৫ মে থেকে এই পর্যন্ত সাত নারী অধিকার কর্মীকে আটক করেছে সৌদি আরব। মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি আটকের শিকার হওয়া নারীরা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও নারীদের জন্য পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা বিলোপের দাবি জানিয়ে আসছেন।

এইচআরডব্লিউ-র মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক সারাহ লিয়াহ হুইটসন বিবৃতিতে বলেছেন, সৌদি আরবে যে প্রকৃত সংস্কারবাদীরা প্রকাশ্যে মানবাধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের বলে এসেছেন; তাদের জন্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‌‌‘সংস্কার প্রচারণা’ ভয়ের উন্মত্ততা তৈরি করেছে। হুইটসন বলেন, বার্তা খুবই পরিস্কার। যুবরাজের অধিকার এজেন্ডা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেই জেলে যেতে হবে।

আটক হওয়া নারীদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি ব্লগার ইমান আল নাফজান ও নারী অধিকার কর্মী লুজাইন আল হাথলুল। এর আগে আমিরাত থেকে সৌদিতে গাড়ি চালিয়ে ফেরার চেষ্টার সময় আটক হয়ে ৭৫ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন হাতলুল। এইচআরডব্লিউকে দেওয়া স্বাক্ষ্যে ওই নারী দাবি করেছেন গত বছর সৌদি রাজদণ্ডে  তাদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই বছর এক রাজ-ডিক্রিতে গাড়ি চালানোর ওপরে সৌদি নারীদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ডিক্রি অনুযায়ী ‘ইসলামী আইন মোতাবেকভাবে’ এই বছরের ২৪ জুন থেকে প্রথম বারের মতো সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমোদন পাবেন।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতির আগের দিন শুক্রবার গালফ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে আটকের খবর জানায়। তারা জানিয়েছে হাতলুলকে তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে নাফজান মাত্র একবার তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সৌদি সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও এখনও দেশটিতে নারীদের জন্য অন্যতম বড় বড় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ ওই পরিকল্পনার নেপথ্য ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ তেল নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতি বহুমুখী করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এখনও সৌদি আরবে নারীদের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা প্রচলিত। আইন অনুযায়ী নারীদের পড়াশুনা, ভ্রমণ বা অন্য কোনও কাজের জন্য বাবা, স্বামী বা ভাইয়ের অনুমতির দরকার পড়ে। সৌদি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি নারী অধিকারের লড়াইয়ের জন্য এই অভিভাবকত্ব একটি বড় ইস্যু। ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৩০ জন অ্যাকটিভিস্ট ও বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে সৌদি আদালত। এইচআরডব্লিউ এর মতে এদের অনেককেই ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।