ভারত ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের: মোদি

রাশিয়াকে ‘ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু’ উল্লেখ করে আসন্ন দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরালো হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (২১ মে) সোচিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু, আমাদের মধ্যে দীর্ঘ ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন আমার ব্যক্তিগত বন্ধু এবং ভারতের বন্ধু।’

মোদি ও পুতিন
পুতিনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার জন্য সোমবার (২১ মে) সকালে রাশিয়ায় পৌঁছান নরেন্দ্র মোদি৷ তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরেই উপস্থিত ছিলেন পুতিন৷ পরে কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী শহর সোচিতে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন দুই নেতা। গত এপ্রিলে চীন সফর এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠকের পর এবার রাশিয়ায় যান মোদি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয় অঞ্চলে বিরোধ আর চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তোষের মধ্যে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করতে চাইছে ভারত।  

সোমবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় এবং পরে বার বারই মোদিকে দুই দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তার উপর জোর দিতে দেখা গেছে। এদিন বৈঠক শেষ হওয়ার পর মোদি বলেন, ‘এধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি পুতিনের কাছে কৃতজ্ঞ। দুদেশের এই দীর্ঘ বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ পুতিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত চার বছর ধরে আপনি এবং আমি পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছি। এতে আমি আনন্দিত।’

টুইটারেও মোদি জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনা ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। মোদি লিখেছেন: ‘ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমাদের এ বন্ধন অব্যাহত থাকবে এবং আসন্ন বছরগুলোতে তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দু’বছর বছর ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে অতীতের মাধুর্য নেই ভারতের। বরং পাকিস্তানের সঙ্গেই দৃশ্যত ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে মস্কো। এই নতুন বন্ধুত্বের পেছনে চীন কলকাঠি নাড়ছে বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যথেষ্ট চাপে থাকা দিল্লি প্রবলভাবে চেষ্টা করছে ভারত-রাশিয়ার সেই পুরনো অক্ষকে আবারও জাগিয়ে তুলতে। আর সেই লক্ষ্যেই তড়িঘড়ি ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের (নভেম্বরে) আগেই পুতিনের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করতে সোমবার রাশিয়ায় যান মোদি।  

এমনকি চলতি বছরেই রাশিয়া থেকে পাঁচটি ‘এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ (সাড়ে চারশো কোটি ডলারের চুক্তি) কেনার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।

গত ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতসহ বন্ধু রাষ্ট্রদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে,রাশিয়ার কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু কেনার আগে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কথা মাথায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক মুখ্য উপ-সহকারী মন্ত্রী টিনা কাইদানো বলেন,‘আমি আশা করছি কেবল ভারতই নয়, আমরা যাদের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে বুঝতে হবে রাশিয়ার কাছ থেকে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা ক্রয় করা হলে সে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করবো। কারণ, আমাদের বিদ্যমান আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য পাশ হওয়া ক্যাটসা আইন (কাউন্টারিং আমেরিকাজ অ্যাডভার্সারিজ থ্রু স্যাংশন অ্যাক্ট) আনার পরে পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল হয়ে গিয়েছে ভারতের কাছে। কারণ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার রণনীতি এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে ভারতের। এ ছাড়া, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জড়িয়ে রয়েছে বিপুল অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ। যুক্তরাষ্ট্রকে চটিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার ফলাফলও এখন আর অস্পষ্ট নয়। ফলে নয়াদিল্লির চিরাচরিত ভারসাম্যের কূটনীতি এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।