ইয়েমেনকে ১০ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা দেবে তুরস্ক-কাতার

সৌদি জোটের সামরিক অভিযানের মুখে থাকা ইয়েমেনকে ১০ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা দেবে তুরস্ক ও কাতার। রবিবার তার্কিশ রেড ক্রিসেন্ট এবং কাতার চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

Turkey, Qatar to donate $1 million to Yemenইস্তাম্বুলের রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় তার্কিশ রেড ক্রিসেন্টের প্রধান কেরেম কিনিক এবং কাতার চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সিইও ফয়সাল রশিদ আল ফেহাইদা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দুই প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা অনুযায়ী, দুইটি ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রথমত, খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে সেখানকার একটি হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোএনটারোলজিক্যাল এন্ডোসকপিক ট্রিটমেন্ট সেন্টার গড়ে তোলা হবে।

এদিকে, ইয়েমেনে প্রায় এক কোটি মানুষকে যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে না হয় সেজন্য খাদ্য পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির জরুরি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দর দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি ও খাদ্য দ্রুত ইয়েমেনে ঢুকতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শুক্রবার জেনেভাতে এক লিখিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

তিন বছর ধরে ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে। দেশটির নিয়ন্ত্রণ কার্যত চলে গিয়েছিল ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের হাতে। ইয়েমেনকে উদ্ধার করার কথা বলে সৌদি আরব যুদ্ধ জোট গঠন করে এবং হুথিদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখে। তাদের বিমান হামলা থেকে বিয়েবাড়ি এমনকি জানাজার নামাজও বাদ যায়নি।

রয়টার্স জানিয়েছে, গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য ঢুকতে দিচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, হুথিদের অস্ত্র আমদানি ঠেকাতে তারা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপে বন্দর অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও এখনও পণ্য খালাস স্বাভাবিক গতি পায়নি। এদিকে আমদানি করা খাদ্য পণ্য ইয়েমেনে ঢুকতে দেরি হওয়ায় দেশটির খাদ্য পরিস্থিতি ক্রমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। দেশটি তার ৯০ শতাংশ খাবার বাইরে থেকে আমদানি করে থাকে। ইয়েমেনে সহায়তা পাঠানোতে গতি আনার লক্ষ্যে গত মাসে জাতিসংঘ নিজেই জাহাজ পরিদর্শনের কাজ শুরু করে। তারপরও সৌদি জোট  নিজস্ব কর্তৃত্বে জাহাজ পরিদর্শন করতে থাকায় পণ্য খালাস প্রক্রিয়া ধীর গতির হয়ে পড়েছে। এতে বাণিজ্যিক জাহাজ পরিচালনাকারীরাও অসন্তুষ্ট।

অপরদিকে, নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও সীমিত করে দিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। সে কারণে পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা ও তায়েজ শহরে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত তিন বছরের ইয়েমেন যুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও প্রায় ৩০ লাখ। বড় ধরনের কলেরা মহামারির আশঙ্কাতেও রয়েছে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্ক-কাতারের মানবিক সহায়তার ঘোষণা এলো।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সংঘর্ষের সময় বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক স্থাপনা রক্ষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি একাধিকবার আহ্বান জানানো হয়েছে।