রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য প্রকাশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে রয়েছে তা প্রকাশ করতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রভাবশালী পাঁচজন সিনেটর। সোমবার (১১ জুন) প্রকাশিত এক চিঠিতে তারা এই আহ্বান জানান।

মাইক পম্পেওরোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতার সঙ্গে মিয়ানমারের যেসব ব্যক্তি জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এতে স্বাক্ষরকারী পাঁচ সিনেটর হলেন– সুসান কোলিনস, মর্কো রুবিও, জেফ মার্কলে, রিচার্ড ডুরবিন এবং টিম কেইন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার (ডিআরএল), এবং গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস অফিস (জিসিজে) রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার তথ্য সংগ্রহ করে। ডিআরএল ও জিসিএল এক হাজার রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে কী ধরনের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন এই প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হবে।

সোমবার প্রকাশিত সিনেটরদের ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রতিবেদনে নৃশংসতার যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হবে বলে তারা মনে করেন।

সিনেটররা লিখেছেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরো প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি। মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যার মতো কোনও বিষয় থাকলেও তা প্রকাশ করা হোক। প্রত্যেকটি ঘটনা ধরে ধরে সতর্কতার সঙ্গে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করতে হবে, যেন কোনও ধরনের রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক প্রভাব ছাড়া প্রতিবেদনটির বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।’

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যত ধরনের উপায়ে কাজ করা যায় তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকদের প্রতি আহ্বান জানান সিনেটররা। রোহিঙ্গাদের ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে তাদের ওপর অবরোধ আরোপেরও আহ্বান জানান পাঁচ সিনেটর।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকি হ্যালিকে উদ্ধৃত করে সিনেটররা বলেন, ‘একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে বার্মিজ সেনাবাহিনী নিষ্ঠুর অভিযান চালিয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রায় ৬ লাখ ৯৩ হাজার রোহিঙ্গা সেনাবাহিনীর নির্মম নিযাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়েছেন। এ সময় সেনাবাহিনী নির্বিচারে মানুষ হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘হাজার হাজার রোহিঙ্গা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের অনেকেই পরে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। বার্মা সরকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি। এমনকি জাতিসংঘের তদন্ত দলকেও সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেকে যাওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিনেটররা চাইছেন, সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হওয়া সব রোহিঙ্গারা যাতে ন্যায়বিচার পান।

সিনেটররা বলেন, ‘২০১৮ সালের ২৪ মে সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে নেওয়া অঙ্গিকার অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।’

মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে পম্পেও এর প্রতি আহ্বান জানান সিনেটররা। তারা বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে এবং এ লক্ষ্যে ইউএনএইসিআর ও ইউএনডিপি মিয়ানমার সরকারকে যে স্মরকলিপি দিয়েছে তা মানতে দেশটিকে বাধ্য করতে হবে।’  

চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা হচ্ছে তাদের সঙ্গে বার্মিজ কর্তৃপক্ষের নৃশংসতার সর্বোশেষ উপাখ্যান। রোহিঙ্গাদের বাইরেও মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ব্যপারটা এমন, যেন এই নির্যাতন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতে থাকবে। তাই কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।