সিরিয়ায় আরও একটি রাসায়নিক হামলার প্রমাণ পেয়েছে ওপিসিডব্লিউ

গত বছরের মার্চে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় চালানো হামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সারিন ও ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে রাসায়নিক অস্ত্রবিরোধী পর্যবেক্ষক সংস্থা (ওপিসিডব্লিউ)। বুধবার (১৩ জুন) নতুন এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি এ কথা জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

দৌমায় রাসায়নিক হামলায় আহত একজন (ফাইল ফটো)
ওপিসিডব্লিউ এক বিবৃতিতে জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ হামার লাটামেনাহ শহরের দক্ষিণে সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ লাটামেনাহ হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকায় ক্লোরিন গ্যাসকে খুব সম্ভবত রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ হামলার জন্য নির্দিষ্ট করে কাউকে দায়ী করেনি ওপিসিডব্লিউ। সিরিয়ার সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘ-ওপিসিডব্লিউ’র যৌথ তদন্ত অনুযায়ী, সিরীয় বাহিনী সারিন ও ক্লোরিন দুই গ্যাসই ব্যবহার করেছে। বিদ্রোহীরাও একবার সালফার মাস্টার্ড গ্যাস ব্যবহার করেছে।

এ বছরের ৭ এপ্রিল দামেস্কের কাছে দৌমায় চালানো একটি হামলায় রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। ওই হামলার পরই সিরিয়ার সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। এ মাসেই ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এপ্রিলে সিরিয়ান-আমেরিকান চিকিৎসকদের সংগঠন জানিয়েছিল, বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকা দৌমাতে সিরিয়ার হামলার পর থেকে তাদের কাছে যেসব রোগী গিয়েছিল তাদের মধ্যে রাসায়নিক হামলার শিকার হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট। এপ্রিলের ৭ তারিখে হওয়া হামলায় অন্তত ৭০ জন মারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে জানা যায় বেলজিয়ামের তিনটি রাসায়নিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত সারিন গ্যাস তৈরির উপাদান সরবরাহ করে আসছে। সাধারণ কাজে ব্যবহার্য রাসায়নিক থেকেই সারিন গ্যাস উৎপাদন করা যায়।

২০১৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠান সিরিয়াতে রাসায়নিক উপাদানের ২৪টি চালান পাঠিয়েছিল। আদালতের জারি করা সমন থেকে জানা গেছে, এক সাথে কাজ করা ওই তিনটি প্রতিষ্ঠান সিরিয়াতে ১৬৮ টন আইসোপ্রোপানল, ২১৯ টন অ্যাসিটোন, ৭৭ টন মিথানল এবং ২১ টন ডাইক্লোরোমিথেন সরবরাহ করেছে। আইসোপ্রোপানল ও মিথাইলফসফোনাইল ডাই ফ্লুরাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত সারিন গ্যাস উৎপাদন করা হয়। ‘কেমিক্যাল উয়েপন কনভেনশন’ অনুযায়ী ১৯৯৩ সাল থেকে সারিন গ্যাস নিষিদ্ধ।

এদিকে বুধবার (১৩ জুন) সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে আইএসের এক সদস্যের আত্মঘাতী হামলায় হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) ছয় সদস্য নিহত হয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আব্দেল রহমান বলেন, ‘এইচটিএস (হায়াত তাহরির আল শামস) যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত একটি সড়কে বোমাভর্তি গাড়ি নিয়ে এক জিহাদি আত্মঘাতী হামলা চালায়। এতে ছয় এইচটিএস যোদ্ধা নিহত হয়।’

এইচটিএস (হায়াত তাহরির আল শামস)-এর নেতৃত্বে রয়েছে সিরিয়ার সাবেক আল কায়েদা শাখা। সূত্র: মিডল ইস্ট আই