কেন ভেঙে গেল কাশ্মিরের জোট সরকার?

জম্মু-কাশ্মিরে মেহবুবা মুফতির দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-পিডিপি ও ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যকার আদর্শিক সংঘাত ছিল শুরু থেকেই। কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু আসিফা ধর্ষণের ঘটনায় মেহবুবা মুফতি দুই বিজেপি মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলে মতভেদ তীব্র হয়। পারস্পরিক বিরোধ চূড়ান্ত রূপ পায় কাশ্মিরের জঙ্গিবিরোধী অভিযান প্রশ্নে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে জঙ্গিবিরোধী অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছিল। মেহবুবার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা আর বাড়াতে রাজি হয়নি বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার।
ফাইল ছবিতে নরেন্দ্র মোদি ও মেহবুবা মুফতি

তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকা মতভেদের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার প্রায় সাড়ে তিন বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিজেপি। এদিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জম্মু-কাশ্মিরে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-পিডিবি ও ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যকার জোট ভেঙে যাওয়ার খবর দিয়েছে। জোট সরকার থেকে বিজেপির সমর্থন প্রত্যাহার করার ধারাবাহিকতায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন পিডিবি নেতা মেহবুবা মুফতি। ভারতীয় সংবিধান মোতাবেক, এখন ওই রাজ্যে গভর্নরের শাসন জারি হবে।

ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির অনলাইন ভার্সনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে রমজানের মাসে উপত্যকা জুড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার।  তবে সেই মাসে দু’টি ভিন্ন ঘটনায় খুন হয়েছেন সাংবাদিক সুজাত বুখারি এবং সেনা জওয়ান আওরঙ্গজেব। মেহবুবা চাইছিলেন অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হোক। কিন্তু ওই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কারণ দেখিয়ে ঈদের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। এর পরেই পিডিপি-র সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ে, যা জোটের ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ নিয়ে বিজেপি নেতা রাম মাধাব দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে  বলেছেন, ‘সন্ত্রাস, হিংসা এবং কট্টরবাদ উপত্যকায় সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে খর্ব  করছিল। সুজাত বুখারির খুন তার উদাহরণ।’

মেহবুবার দলের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে  রাম মাধাব সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য স্বীকার করেছেন, সরকার গঠনের দিন থেকেই বিজেপির সঙ্গে পিডিপির বিরোধ ছিল। তার ভাষ্য, ‘আদর্শগত কোনও মিল না থাকা সত্ত্বেও আমরা সে দিন উপত্যকায় পিডিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলাম শুধু জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে। না হলে, সেই সময়েই রাজ্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের শাসনে চলে যেত।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, গত এপ্রিলে কাশ্মিরের কাঠুয়াতে ৮ বছরের শিশু আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেহবুবা ও বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সে সময় ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পরোক্ষভাবে অপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেন বিজেপির দুই মন্ত্রী। মামলার বিষয়ে সিবিআইয়ের তদন্তের দাবি করে বের হওয়া মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার দুই বিজেপি সদস্য। ওই ঘটনার পর মেহবুবা মুফতির সরকার থেকে তাদের বরখাস্ত করা হয়।  যা জোটের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি করে।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রাম মাধব বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি-র সঙ্গে পথচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকার থেকে সরে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’ এর পরেই রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন।