ভয়াবহ সহিংসতার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ রবিবার

ভয়াবহ সহিংসতার পর রবিবার শুরু হচ্ছে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। গত সেপ্টেম্বরে প্রচারণা শুরুর পর এ পর্যন্ত এই সহিংসতায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক কর্মী মিলিয়ে কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে এগিয়ে আছেন বামপন্থী রাজনীতিক আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ অবরাডোর। মেক্সিকো সিটির সাবেক এই মেয়র নির্বাচনে জিতলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জয়ী হলে প্রায় একশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকাই দুই দলের বাইরের প্রার্থী হিসেবে তিনি সরকারের দায়িত্ব নেবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

_102277308_047846709

মেক্সিকোতে এবারের নির্বাচনি সহিংসতাকে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। এখন ভোটের দিন আসায় মেক্সিকানরা একে সরকার পতনের সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। বর্তমান সরকারের কারণেই দেশ এই অবস্থায় পৌঁছেছে।  প্রেসিডেন্ট এনরিকে পিনা নিয়েতো ও তার প্রশাসনের ওপর লাখ লাখ সাধারণ মেক্সিকান ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বিশেষ করে দেশটির সংকটাপন্ন অর্থনীতি ও ব্যপক বিস্তৃত দুর্নীতি, অপরাধ ও বিচারহীনতাই এই ক্ষোভের কারণ। আমলো হিসেবে পরিচিত আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাদোর এবার এনরিকের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের দুইবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আমলো এবারের নির্বাচনের দুর্নীতির বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে এসেছেন। তিনি সরকার, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের নির্যাতন বন্ধ করে শ্রমিকদের মজুরি ও পেনশন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ডানপন্থী প্রার্থী রিকার্ডো আনায়াসহ আমলোর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে জনপ্রিয় কিন্তু ভয়ংকর বাউন্ডুলে হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের মতে, তিনি অর্থনীতির দায়িত্ব নেওয়ার মতো বিশ্বস্ত নন। তবে বেশিরভাগ জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের বেশিরভাগই তা মনে করে না। তারা আমলোর হাতেই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।

দুইবার নির্বাচনে হারার এবার জয়ী হলে তিনি মেক্সিকোর প্রধান দুই দলের আধিপত্য শেষ করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে ইনস্টিটিউশনাল রেভ্যলুশনারি পার্টি (পিআরআই) ও ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টি (পিএএন) মেক্সিকোর ক্ষমতায় আছে। আমলো এই দুই দলকেই একই মাফিয়া শক্তির অংশ বলে অভিহিত করে থাকেন। তিনি তার দল মোরেনা নেতৃত্বে একটি বামপন্থী জোট নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আমলোর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনায়া কেন্দ্রী ডানপন্থী জোটের প্রধান। আর ক্ষমতাসীন পিআরআই দলের প্রার্থী হয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী জোসে অ্যান্তোনিও মিয়াদে।

নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি মেক্সিকানরা কংগ্রেসে ১২৮ জন সিনেটর ও ৫০০ ডেপুটিকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত করবেন। দেশটিতে প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ ভোটার রয়েছে।

মেক্সিকো লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির ও গুরুত্বপূর্ণ তেল রফতারিকারী দেশ। তেলের দাম কমে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা পেসোর দামও কমে গেছে। দেশটির ৪০ ভাগের বেশি মানুষ দরিদ্র। ব্যাপকমাত্রায় দুর্নীতি ও সহিংসতার কারণে অনেক কোম্পানি  তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের জন্যও সবচেয়ে ভয়ংকর দেশগুলোর একটি হিসেবেও পরিচিত মেক্সিকো। শনিবার দেশটির কুইনতানা রু রাজ্যের সাবান গ্রামের একটি পানশালায় এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।