সৌদি রাজপরিবারে আবারও ধরপাকড়, কারাগারে অনেকে

কয়েক মাস বিরতির পর আবারও সৌদি আরবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। আটক হয়েছেন রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, রাজপরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ অনেককেই কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আটকের বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য না করলেও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, আটককৃতরা দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হবেন। এক রাজডিক্রির জারির মাধ্যমে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন গত বছরের নভেম্বরে প্রথম দফায় দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করে।সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
দ্বিতীয় দফায় আটকের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা আর আটক হওয়াদের ঘনিষ্ঠরা ওয়াশিংটনভিত্তিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, অভিযোগ ছাড়াই অনেককে হেফাজতে রাখা হয়েছে। অনেকের পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে খুব অল্প বা কোন যোগাযোগই করতে দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, আটক হওয়া অনেককেই সর্বোচ্চ-নিরাপত্তার কারাগারে রাখা হয়েছে আবার অনেকের সঙ্গেই কঠোর আচরণ করা হয়েছে।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহর পুত্র ও রাজধানী রিয়াদের সাবেক গভর্নর প্রিন্স তুর্কি বিন আবদুল্লাহ। এছাড়া সম্প্রতি প্রসিদ্ধ সৌদি ব্যাংকিং গ্রুপ মাহফুজ পরিবারের তিন ধনকুবেরকে আটক করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আটকের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।

ওয়াল স্ট্রিটের খবর অনুযায়ী, কারাগারে আটক থাকাদের মধ্যে রয়েছেন ইথিওপিয়ান বংশোদ্ভূত সৌদি ধনকুবের মোহাম্মদ আল-আমোদি, জায়ান্ট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সৌদি বিনলাদিন গ্রুপের চেয়ারম্যান বকর বিন লাদেন, সৌদি বিনিয়োগ এজেন্সির সাবেক প্রধান আমর আল-দাব্বাগ  ও সাবেক অর্থনীতি বিষয়কমন্ত্রী এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের একসময়ের ঘনিষ্ঠ আদেল ফায়েক।

সৌদি কর্মকর্তারা এসব আটকের বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে দেশটির ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, কয়েকজন আটককৃত দুর্নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।

গত নভেম্বরে এক রাজ ডিক্রির মাধ্যমে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে ধনকুবের প্রিন্স আল আলওয়ালিদ বিন তালালসহ রাজপরিবারের ১১জন প্রিন্সসহ অনেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী আটক হন। আটককৃতদের রিয়াদের বিলাসবহুল হোটেল রিৎজ কার্লটনে রাখা হয়।

সৌদি আরবের দাবি অনুযায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার শর্তে জানুয়ারি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। পরে সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ জমা পড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করতেই ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।

রিৎজ কার্লটন হোটেল থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আবার অনেকের গতিবিধি পর্যবেক্ষেণর জন্য পায়ে মনিটর লাগানো হয়েছে বলে তাদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। আবার অনেকেই সৌদি যুবরাজের পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রচারণায় শামিল হয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে মুক্তি পাওয়া অন্তত একজন সরকারের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেছেন।