যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে যেসব দেশ

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব। বিপাকে পড়বে সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। এমনটাই মনে করছেন পিকটেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদরা।

noname২০১৮ সালের ৬ জুলাই ৩৪ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা উত্তর দেওয়ার হুমকি আসে বেইজিং-এর তরফেও। চীনের অভিযোগ, ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মাবলীর লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে আরোপিত শুল্ক কার্যকর করার পর চীনও তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর করেছে বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাঙ।

ইউরোপ, আমেরিকাসহ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজ করে পিকটেট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে সেসব দেশগুলো যারা উৎপাদনের নানা কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। এই কাঁচামালের আমদানিকারক দেশগুলো আবার তাদের এ থেকে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন দেশ রফতানি করে থাকে।

তালিকা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে লুক্সেমবার্গ, তাইওয়ান, দ্য স্লোভাক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, দ্য চেক রিপাবলিক, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আইসল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড।

আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে একটি বড় অংশের যোগান দেয় লুক্সেমবার্গ। দেশটির রফতানি বাণিজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের ওপর। ব্যাংকিং, তথ্য ব্যবস্থা ও স্টিলসহ নানা খাতে লুক্সেমবার্গের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকে বিশ্বে লুক্সেমাবর্গের অবস্থান দ্বিতীয়। এ তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। তবে বাণিজ্যের ওপর ব্যাপক মাত্রায় নির্ভরশীলতা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি।

আন্তর্জাতিকভাবে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এবং প্রযুক্তি শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তাইওয়ান। দেশটিতে রয়েছে ফক্সকনের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান।

দুনিয়ার শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ফলে দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এশিয়া ও ইউরোপের নানা দেশের ওপর। এরইমধ্যে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডে মন্তব্য করেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধে আদতে কেউই জয়ী হয় না।

এদিকে ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। ১৬-১৭ জুলাই বেইজিংয়ে সিনো-ইউরোপীয় সম্মেলন সামনে রেখে ইইউ নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে একটি জোট গঠন এবং ব্যবসায়িক সুযোগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেশি করে চীনা বাজার গড়ার প্রস্তাব দেয় বেইজিং।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন ও ইউরোপের মধ্যকার সহযোগিতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ‘উষ্ণ বর্তমান’ নিয়ে এসেছে। তারা উভয়ই একপাক্ষিকতা ও  সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করে আসছে। গত সোমবার ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদোয়ার্দ ফিলিপ্পির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াঙ বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই মতবিরোধ ও টানাপোড়েন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী হতে পারে না। সূত্র: আরটি, আল জাজিরা।