‘চরম বৈশ্বিক আবহাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি’

দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় তাপদাহ এবং দাবানালের মতো চরম আবহাওয়া আদতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। এমনটাই মনে করছেন বিশ্বের খ্যাতনামা জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল মান। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি আসলে বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলশ্রুতি।

nonameজলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছিল। এখন বিজ্ঞানীরাও এর পক্ষে সায় দিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাজ্য ও উত্তর ইউরোপে সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহের রেকর্ড তাপমাত্রার পেছনেও রয়েছে এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। আর এই উষ্ণায়ন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ার নেপথ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। এ দুয়ের মধ্যে স্পষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে।

ইউরোপজুড়ে চরম আবহাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে। অধ্যাপক মাইকেল মান দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, আর্কটিক সার্কেল থেকে গ্রিস, উত্তর আমেরিকা থেকে জাপান, দুনিয়াজুড়ে চরম বৈশ্বিক আবহাওয়া প্রকৃপক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। এমন পরিস্থিতি আমরা ইতোপূর্বে প্রত্যক্ষ করিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো আর সূক্ষ্ম নয়। এগুলো কাজ করছে এবং এই গ্রীষ্ম বিষয়টি অনুধাবনের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল, এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যায়ক্রমে হন্ডুরাস, মিয়ানমার ও হাইতি। চতুর্থ অবস্থানে আছে নিকারাগুয়া, পঞ্চম ফিলিপাইন ও ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারে ২০০৮ সালের ‘ঘূর্ণিঝড় নার্গিস'-এর কারণে যে পরিমাণ মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে, তা গত দুই দশকের অন্যান্য ঘটনার চেয়ে ৯৫ ভাগ বেশি। একইভাবে হন্ডুরাসে, ১৯৯৮ সালের ‘হ্যারিকেন মিচ'-এর কারণে ৮০ ভাগের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ১০তম অবস্থানে থাকা থাইল্যাণ্ডে ২০১১ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের ‘হ্যারিকেন প্যাট্রিসিয়া'র ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। এই সময়ে সাইক্লোনের ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। ফলে আবারও বলা দরকার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছে স্বল্পোন্নত ও ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো দাবদাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, যা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ২০১৪ সালের মূল্যায়নে এই বিষয়গুলো উঠে আসে। ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বড় অংশে দাবদাহ ক্রমাগত বাড়ছে। একইভাবে, উত্তর অ্যামেরিকা ও ইউরোপে ভারী বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে এবং কিছু দিন পরপরই বিশ্বের নানা জায়গায় একই উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানিয়েছে যে, এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে।  দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ওই ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। এ কারণে ঘর হারাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ডিডব্লিউ।