আগাছানাশকে ক্যান্সার: মনসান্টোকে ২৯ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

মার্কিন বহুজাতিক কৃষি ও রাসায়নিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মনসান্টোকে প্রায় ২৯ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। মনসান্টোর একটি আগাছানাশক রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারের কারণে এক ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার আইনজীবী এই মামলা দায়ের করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।

_102931217_048026140afp

প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন ডোয়েইন জনসন নামের এক মাঠকর্মী। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি এমন মাঠকর্মী এখন ওই পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।

বিবিসির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার এই রায়ের পর শত শত মানুষ মনসান্টোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। সম্প্রতি মনসান্টো কিনে নিয়ে একীভূত করে ফেলেছে জার্মান ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এজি।

২০১৪ সালে ডোয়েইন জনসনের নন-হজকিন্স লিমফোমা (এক ধরনের ক্যান্সার) শনাক্ত হয়। তার আইনজীবী দাবি করেন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার বেনিসিয়া স্কুলে কাজ করার সময় নিয়মিত আগাছানাশক ব্যবহার করতেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে প্রমাণ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি জানতো তাদের উৎপাদিত রাসায়নিক পণ্য আগাছানাশক রাউন্ডআপ ও রেঞ্জার বিপজ্জনক। কিন্তু তারা ক্রেতাদের এই বিষয়ে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আট সপ্তাহের বিচারের পর বিচারকেরা বহুজাতিক কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া অন্য ব্যয় মিলিয়ে মোট ২৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।

জনসনের আইনজীবী ব্রেনট উইসনার বলেন, ‘বিচারকদের রায়ে দেখা গেছে ওই পণ্যটির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। সঠিক হলে জিতে যাওয়া সহজ।’

মনসান্টোর আগাছানাশকে ক্ষতিকর গ্লাইফোসেট নামের উপাদান রয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছিল। গ্লাইফোসেটের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এটিই প্রথম মামলার ঘটনা ছিল। তবে গ্লাইফোসেটকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলতে নারাজ মনসান্টো। তাদের দাবি, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেবন তারা। স্যান ফ্রান্সিসকো আদালতের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট প্যাট্রিজ বলেন, বিচারকেরা ভুল করছেন।

3000

আদালতের রায়ের পর মনসান্টো এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা জনসন ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে। তবে তারা ৪০ বছর ধরে নিরাপদ ব্যবহারের ইতিহাস থাকা পণ্যটির পক্ষে লড়াই অব্যাহত রাখবে।

বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত আগাছানাশক উপাদান গ্লাইফোসেট। তবে এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুটির এখনও মীমাংসা হয়নি। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনস ক্যান্সার এজেন্সি জানিয়ে দেয় সম্ভবত এটি মানুষের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) বলে আসছে, সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করলে গ্লাইফোসেট নিরাপদ।

তবে আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তুলছেন ইপিএ এই সিদ্ধান্তে কিভাবে পৌঁছালো। তারা প্রমাণ দেখিয়ে বলছেন, ইপিএ’র এই সিদ্ধান্ত নিতে অনৈতিক শিল্প সংশ্লিষ্টতা ছিল। বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর মনসান্টো ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিচারক রায় দিয়েছেন, কফির কৌটায় অবশ্যই সতর্ক বার্তা থাকতে হবে। সেই ক্যালিফোর্নিয়াতেই কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গ্লাইফোসেটকে রাজ্যের ক্যান্সারের জন্য দায়ী উপাদানের তালিকায় রাখা ঠেকাতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপেও গ্লাইফোসেট নিয়ে জোরালো বিতর্ক রয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এটি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এর বিরোধীতা করছেন ফরাসি আইন প্রণেতারা। আর ইউরোপিয়ান কমিশন সম্প্রতি এই আগাছানাশকটিকে আরও পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে।

শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের বিচারকেরা জানান, কোম্পানিটি প্রতারণা করেছেন আর তাদের আগাছানাশকটি বস্তুগতভাবে জনসনের অসুস্থতার জন্য দায়ী ছিল।